করোনায় ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়েছে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার

• করোনা মহামারি সৃষ্টি করেছে ভয়ঙ্কর আয় বৈষম্যের
• ৯ মাসে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার
• শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির সম্পদ বেড়েছে ৫৪০ বিলিয়ন ডলার
• বিশ্বে ২০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন মানুষ এখন দরিদ্র মানুষের কাতারে
• এদের বেশিরভাগই আর কখনো স্থায়ীভাবে দারিদ্র্যতা থেকে বের হতে পারবে না
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ। অন্য অনেক খাতের মতো মহামারির প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও। আর তাতেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ভয়ঙ্কর আয় বৈষম্যের।
ফলে প্রভাব পড়ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ উন্নত জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল খাতে। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অক্সফাম। সুইজারল্যান্ডের দাভোস সম্মেলনে এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।

‘দ্য ইনইক্যুয়ালিটি ভাইরাস’ নামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ‘ত্রুটিযুক্ত ও শোষণমূলক’ অর্থনৈতিক পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে সমাজে বৈষম্য ও অত্যাচার শক্তভাবে গেঁথে বসেছে। এটাকে কাঠামোগত বর্ণবাদ বলেও অভিহিত করেছে তারা।
প্রতিষ্ঠনটির দাবি, এগুলোই হচ্ছে অবিচার ও দারিদ্র্যতার মূল কারণ।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে অক্সফাম বলছে, ‘গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ধনীদের বা বিলিয়নারদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির সম্পদ বেড়েছে ৫৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
ঠিক এই একই সময়ে অর্থ্যাৎ করোনা মহামারির সময়ে শীর্ষ ধনীদের সম্পদ রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছেন এবং ক্ষুধা ও চরম দারিদ্র্যতার শিকার হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ে সারা বিশ্বে ২০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন মানুষ দরিদ্র মানুষের কাতারে নেমে গেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে গত ৯০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ চাকরি সংকট তৈরি হয়েছে। কয়েক কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নারীরা। কোভিড-১৯ প্রায় প্রতিটি দেশে একইসঙ্গে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়াতে পারে।

বিশ্বের প্রায় এক হাজার শীর্ষ ধনী মানুষ মাত্র নয় মাসের মধ্যেই তাদের করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন। তবে দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর মানুষের করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে এক দশকেরও বেশি সময় লাগতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীতে যেসব মানুষের দৈনিক আয় ২ ডলার থেকে ১০ ডলারের মধ্যে, করোনা মহামারির মধ্যে তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন।’
একই সময়ের মধ্যে অর্থ্যাৎ লকডাউনের কারণে বাণিজ্যিক ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকলেও পকেটে বিলিয়ন ডলার থাকা মানুষেরা নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যময় চলাচলের জন্য কিনেছেন ব্যক্তিগত বিমান।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ জন ধনী সম্মিলিতভাবে যে পরিমাণ সম্পদ বৃদ্ধি করেছেন, কেবল সেটা দিয়েই পৃথিবীর যে কাউকে দারিদ্র্যতার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। একইসঙ্গে সেই অর্থ দিয়ে পৃথিবীর সবাইকে করোনা টিকা দেওয়া সম্ভব।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহামারিতে গরিব হয়ে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষ আর কখনোই স্থায়ীভাবে দারিদ্র্যতা ও নিরাপত্তাহীনতা থেকে বের হতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিশ্বব্যাপী এই মহামারি ও সংকট থেকে ব্যবসায়িক লাভ করেছে বিলিয়নাররা। তাদের এই ক্রমবর্ধমান সম্পদ লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ব্যবহার করা উচিত।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী ও প্রান্তিক বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ। আর তাই করোনা-উত্তর বিশ্বে আয়ের ওপর ভিত্তি করে কর নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র: এনডিটিভি
টিএম