মহামারির দ্বিতীয় বছরে বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ কোটি

করোনা মহামারির দ্বিতীয় বছরে, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ কোটিরও বেশি মানুষ। প্রথম বছরে এই সংখ্যা ছিল ৫ কোটি। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের ও করোনায় বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের হিসেব অনুযায়ী, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২৫ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৪০ জন।
২০১৯ সালে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল চীনে।
তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
রয়টার্সের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে প্রথমবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ কোটিতে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ১ বছর; কিন্তু পরবর্তী প্রায় এক বছরের মধ্যে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ।
বিশ্লেষণে আরও জানা গেছে, যদিও গত তিন মাসে বিশ্বজুড়ে দৈনিক সংক্রমণের হার ৩৬ শতাংশ কমেছে, কিন্তু এখনও প্রতি ৯০ দিনে বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন ৫ কোটিরও বেশি মানুষ; এবং তাদের অধিকাংশই আক্রান্ত হচ্ছেন ভাইরাসটির অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টায়।
মহামারি ঠেকানো ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনাসহ যেসব সতর্কতা পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে সাধুবাদ জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি তারা সতর্কবার্তা দিয়েছেন- আসন্ন শীতে বিভিন্ন ছুটি উপলক্ষ্যে জনসমাগম হলে সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।
গত ৩ নভেম্বর ডব্লিউএইচওর মহামারিবিদ মারিয়া ভ্যান কারখোভ রয়টার্সকে বলেন, ‘এখন থেকে ২০২২ সালের শেষ; এই সময়সীমা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি চাই, সেক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আমরা আনতে পারি।’
‘এবং একবার যদি তা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে এ রোগে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু- উভয়ই ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে।’ রয়টার্সের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্বের ২৪০টি দেশের মধ্যে ৫৫টিতে এখনও বাড়ছে করোনায় সংক্রমণ-মৃত্যু। এসব দেশের মধ্যে রাশিয়া, ইউক্রেন ও গ্রিসে প্রতিদিন রেকর্ডসংখ্যক রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন।
পশ্চিমে সংক্রমণ-মৃত্যুর উর্ধ্বমুখী হার দেখা যাচ্ছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে। সাম্প্রতিক বিশ্বের দৈনিক সংক্রমণের প্রায় অর্ধেকই ঘটছে এসব দেশে। রয়টার্সের সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহে প্রতি চারদিনে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
এছাড়া, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ইতিমধ্যে রাজধানী মস্কোতে লকডাউন জারি করেছে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকা বণ্টনে সমতা ও বিশ্বজুড়ে টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়ানোর পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন বেশ কয়েকজন বৈশ্বিক নেতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এখনও পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ করোনা টিকার একটি ডোজও নিতে পারেননি।
সোমবার নিউজিল্যান্ডে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর বাণিজ্যিক সংঘ এপিইসির বৈঠক হবে নিউজিল্যান্ডে। সেখানে মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়ানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন।
সোমবার এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য থাকবে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক করোনা টিকা, টেস্টিং কিট ও পিপিইর সরবরাহ অব্যাহত রাখা।’
এসএমডব্লিউ