নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ইস্যুতে পুতিনকে বাইডেনের হুঁশিয়ারি

মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সতর্ক করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ক্ষমতাগ্রহণের পর পুতিনের সঙ্গে প্রথম ফোনালাপে বাইডেন এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেণ করেন বলে মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
রাশিয়ায় চলমান পুতিনবিরোধী বিক্ষোভ এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র চুক্তি নিয়েও ফোনালাপে কথা বলেন উভয় নেতা।
এদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করায় ফোনালাপে জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

ফোনালাপের পর উভয় পক্ষই অবশ্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে।
ভ্লাদিমির পুতিন তথা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাবসম্পন্ন না হওয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রায়ই সমালোচনার মুখোমুখি হতে হতো। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবার ওবামাও রাশিয়ার প্রতি দুর্বল ছিলেন বলে শোনা যায়। যার কারণে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলও ঠেকাতে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ওবামার শাসনামলে পূর্ব ইউক্রেনে আক্রমণ ও সিরিয়ায় পেশি শক্তি প্রদর্শন করে পুতিনের রাশিয়া।
বাইডেন-পুতিন ফোনালাপের বিষয়ে যা বলছে হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিন
ফেনালাপের বিষয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী ওয়াশিংটনের স্বার্থ ও মিত্রদের রক্ষায় রাশিয়ার যেকোন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র; পুতিনের সঙ্গে ফোনকলে বাইডেন মূলত এই বিষয়টিই পরিষ্কার করে দিয়েছেন।’
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে দেওয়া হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলা, আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকা মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার চক্রান্তের অভিযোগ এবং রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার বিষয়েও পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন বাইডেন।
এদিকে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে অবশ্য হোয়াইট হাউসের মতো কোন কোন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে; তা উল্লেখ করা হয়নি।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, ‘মস্কো ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলে তাতে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে বলে বাইডেনকে জানান পুতিন। এছাড়া সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ‘‘বিশেষ দায়িত্ব’’ রয়েছে বলেও ফোনালাপে উল্লেখ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এই দুই নেতার মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।’
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন বেশি কঠোর হবেন; ফোনালাপের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও পুতনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির প্রশাসনে যে পরিবর্তন এসেছে, তাকে স্বাগত জানিয়ে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন।

সম্প্রতি ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘অত্যন্ত আন্তরিক’ ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করছেন।
তার ভাষায়, ‘দুদেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ সংলাপ হবে- আমরা শুধু এটিই চাই।’
এদিকে সম্প্রতি দেশটির কারাবন্দি বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির মুক্তির দাবিতে রাজধানী মস্কোসহ সেইন্ট পিটার্সবুর্গ ও অন্যান্য শহর থেকে বিক্ষোভকারীদের গণআটকের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। নাভালনির সমর্থকদের গ্রেফতারের মাধ্যমে রাশিয়ায় ক্ষমতাসীন পুতিন সরকার বিদ্রোহ দমনে কর্কশ ও কঠোর কৌশল অবলম্বন করছে বলে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অবলিম্বে নাভালনি ও তার সমর্থকদের মুক্তি দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রথম ভাগে তৎকালীন বিশ্বের পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক ব্লকের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনের বিষয়ে রাশিয়ার ভূমিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বী দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও শীতল করে তুলেছে।
সূত্র: বিবিসি
টিএম