করোনার সংক্রমণ দশ কোটি ছাড়াল

করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণের বিস্তার ও টিকা স্বল্পতায় উদ্ভূত সংকটের মধ্যেই বুধবার বিশ্বজুড়ে মহামারি এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দশ কোটি ছাড়িয়েছে বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত এক বছরের বেশি সময়ে মহামারি নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বের এক দশমিক তিন শতাংশ মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছে। আর ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ লাখের বেশি মানুষ।
বছরের শুরু থেকে ৭ দশমিক ৭ সেকেন্ডে গড়ে একজন করে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। একই সময়ে দৈনিক ৬ লাখ ৬৮ হাজার ২৫০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বে করোনায় মৃত্যুহার এখন ২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের করা হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত মানুষের অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা। অথচ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশের বাস এসব দেশে।

চীন থেকে প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর পর মোট করোনা রোগীর সংখ্যা পাঁচ কোটি ছাড়াতে সময় লেগেছিল ১১ মাস। তুলনামূলকভাবে এর পরের মাত্র তিন মাসে আরও পাঁচ কোটি মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এখন পর্যন্ত ৫৬টি দেশে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এসব দেশে টিকা নিয়েছেন ৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ। জনসংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ২৯ শতাংশ জনগণকে টিকা দিয়ে ইসরায়েল আছে শীর্ষে।

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত আড়াই কোটির বেশি মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; যা বিশ্বের মোট আক্রান্তের ২৫ শতাংশ। যদিও বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশের বাস যুক্তরাষ্ট্রে।
করোনাভাইরাসে দৈনিক মৃত্যুর গড়েও শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বে প্রতিদিন ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারানো পাঁচ জনের একজনই যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। দৈনিক আক্রান্তও সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা ৪ লাখ ২৫ হাজার। বিশ্বের করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানি হয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। কিন্তু ব্রাজিলের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করোনায় প্রাণহানি দ্বিগুণের বেশি।

ইউরোপ
করোনা সবচেয়ে বিপর্যস্ত মহাদেশ ইউরোপে গড়ে চারদিনে দশ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ইউরোপে আক্রান্ত প্রায় তিন কোটি। এদিকে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে প্রাণহানি লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্বের মোট করোনায় আক্রান্ত মানুষের প্রায় দশ শতাংশ রাশিয়া, পোল্যান্ড ও ইউক্রেনসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর বাসিন্দা। ইউরোপের আরও অনেকে দেশ ভাইরাসটির সংক্রমণের বিস্তার বাড়ছে।
তবে টিকা নিয়ে ইউরোপে সংকট দেখা দিয়েছে। চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ইউরোপিয়ান দেশ যথাসময়ে ফাইজার-বায়োএনটেক ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পাচ্ছে না। এ নিয়ে সাবধান করে দিয়েছে ইইউ।

এশিয়া ও আফ্রিকা
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হওয়া ভারতে করোনার সংক্রমণ দিন দিন কমছে। দেশটিতে এখন গড়ে প্রতিদিন ১৩ হাজার ৭০০ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সর্বোচ্চ সংক্রমণের তুলনায় যা ১৫ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার বলেছেন, করোনার টিকা নিয়ে ভারত আত্মনির্ভরশীল। প্রসঙ্গত, দেশে তৈরি দুটি করোনা টিকার অনুমোদন দেওয়ার পর প্রথম ছয় দিনে দশ লাখ মানুষকে টিকা দিয়েছে ভারত।
সম্প্রতি করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানে লকডাউন আরোপের এক বছরে পার করা দেশ চীনে ভাইরাসটির সংক্রমণ এতটাই বেড়েছে যে, যাত গত বছরের মার্চের পর সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে সেখানে।
এদিকে করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলো এগিয়ে থাকলেও টিকার সরবরাহ পাওয়ার জন্য এখনও সংগ্রাম করতে হচ্ছে গরিব মহাদেশ হিসেবে পরিচিত আফ্রিকার দেশগুলোকে।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়ার করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরনের বিস্তার নিয়ে শঙ্কা তো রয়েছেই। বিদ্যমান করোনার ধরনটির চেয়ে নতুন ধরনটি আরও বেশি প্রাণঘাতী হওয়ায় শঙ্কা দিন দিন বাড়ছেই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের করা হিসাব অনুযায়ী আফ্রিকার দেশগুলো এ পর্যন্ত ৩৫ লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৮৫ হাজারের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ওই ধরনের নাম দেওয়া হয়েছে ৫০১ওয়াই.ভি২; যা বিদ্যমান ধরনটির চেয়ে আরও ৫০ শতাংশ বেশি প্রাণঘাতী। কমপক্ষে ২০ দেশে এই ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
এএস