প্রিয়জন হারানো স্বজনদের কণ্ঠরোধ করছে চীন

করোনাভাইরাসের উৎসের তদন্ত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একদল প্রতিনিধি এখন উহানে অবস্থান করলেও চীন সরকারের চাপে এ নিয়ে কোনো কিছুই বলতে পারছেন না সেখানে করোনায় প্রাণ হারানো মানুষের স্বজনরা।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অসহায় স্বজনরা বুধবার জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের গ্রুপ ডিলিট করে এ নিয়ে কোনও কিছু না বলার জন্য চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ চাপ প্রয়োগ করছে।
বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনার সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হওয়া উহানের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার জন্য প্রিয়জন হারানো মানুষরা এক হয়ে অনলাইনে গ্রুপ খুলেছিলেন।
তাদের অভিযোগ, এক বছরের বেশি সময় আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যখন ভাইরাসটির প্রকোপ শুরু হয় তখন হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের কর্মকর্তারা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় নিজ স্বজনদের হারিয়েছেন তারা।
নানা সমালোচনার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি দলকে উহানে করোনার উৎস তদন্তের অনুমতি দেওয়া চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর যেকোনও পরিস্থিতি এড়াতে ক্ষুব্ধ স্বজনদের এমন করে চাপে রেখেছে।
প্রতিনিধি দল আসা নিশ্চিত হওয়ার পর করোনায় প্রিয়জন হারানো একশ’ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উইচ্যাটে এক বছর ধরে সচল একটি গ্রুপ দশদিন আগে হঠাৎ নাই হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন গ্রুপটির সদস্য ঝাং হেই।
এটাতে প্রমাণিত যে তারা (চীনা কর্তৃপক্ষ) খুবই স্নায়বিক চাপে ভুগছে। তারা এ কারণে ভীত যে, এসব পরিবার ডব্লিউএইচও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
করোনায় বাবা হারানো ৫১ বছর বয়সী ঝাং
নানা নাটকীয়তার পর অনুমতি মিললেও গত ১৪ জানুয়ারি উহানে পৌঁছায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিষেশজ্ঞরা। তবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে আগামী বৃহস্পতিবার তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। উহানের করোনা মোকাবিলার কট্টর সমালোচক ঝ্যাং আরও বলেন, ‘যখন ডব্লিউএইচও প্রতিনিধিরা উহানে আসলো তখন তারা আমাদের গ্রুপটি ডিলিট করে দিল। এতে অনেকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি
• ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়
• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি
• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে
• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে
• ১১ মার্চ ‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
গ্রুপটির আরও অনেক সদস্য গ্রুপটি ডিলিট করে দেওয়া ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দল মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করলে তাদের করোনা নিয়ে বিব্রতকর কিছু না বলার চাপ আসার কথা নিশ্চিত করেছেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ কোটি ৯৩ লাখ ছাড়িয়েছে এবং প্রাণ গেছে ২১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি।
এএস