পশ্চিমবঙ্গকে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ বানাতে চান মমতা, অভিযোগ বিজেপির

ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন সেখানকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ বানাতে চায় বলে অভিযোগ করেছে প্রদেশের বিরোধীদল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করে এই অভিযোগ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
বিজেপির রাজ্য সভাপতির দাবি, তৃণমূল যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়, তা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না লিখলেও দিলীপ তার পোস্টে বলেছেন, ‘মাননীয়া লড়ছেন গ্রেটার বাংলাদেশের লক্ষ্যে।’ ওই পোস্টের পর কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এখন বিজেপি দলটাই ‘গ্রেটার তৃণমূল’ হয়ে গিয়েছে। সেই হতাশারই প্রকাশ ঘটেছে দিলীপ ঘোষের পোস্টে।’
তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘দিলীপ ঘোষের এ সব কথরে কোনও জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।’ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম জয়ন্তীতে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বক্তৃতা না করলেও প্রতিবাদ জানানোর শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছিলেন।
দিলীপের এই পোস্টের পর জল্পনা ছড়িয়েছে, নেতাজির জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা বিজেপি কি তার পাল্টা দিতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে হাতিয়ার করছে?
তৃণমূলের গ্রেটার বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য রয়েছে বলে আক্রমণের যুক্তি হিসেবে পোস্টে তিনটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন দিলীপ। প্রথমত, ভিক্টোরিয়ায় মমতার মুখে ‘বাংলাদেশি স্লোগান’ ছাড়াও দিলীপের অভিযোগ— অতীতে তৃণমূলের প্রচারে বাংলাদেশি অভিনেতা ও তৃণমূলের উদ্যোগে পূজায় বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের অভিনেতা ফেরদৌস রায়গঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী কানহাইয়া লাল আগরওয়ালের সমর্থনে প্রচার করেন। সেই সময় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি দিলীপ মন্তব্য করেছিলেন, ‘এবার হয় তো ইমরান খানকেও প্রচারে আনবে তৃণমূল!’ এই বিতর্ক অনেক দূর গড়ায়। শেষ পর্যন্ত ফেরদৌসকে কালো তালিকাভুক্ত করে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
Posted by Dilip Ghosh on Wednesday, 27 January 2021
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সেই প্রসঙ্গ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবার টেনে এনেছেন দিলীপ ঘোষ। শুধু দিলীপই নন, এই বিষয়ে বিজেপির অন্যান্য নেতারাও সরব হয়েছেন। এর আগেও বিজেপি ‘নাগরিকত্ব আইন’ বা ‘অনুপ্রবেশ’ ইস্যুতে একাধিকবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছে, ক্ষমতাসীন তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গকে ‘পশ্চিম বাংলাদেশ’ বানাতে চায়।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে একই কথা বলছে বিজেপির উদ্বাস্তু শাখার রাজ্য আহ্বায়ক মোহিত রায়। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, এটা মনে রাখতে হবে যে, ‘জয় বাংলা’ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘোষণা করা জাতীয় স্লোগান। এই স্লোগান রাজ্যে ব্যবহার করার লক্ষ্য তোষণ রাজনীতি। এই স্লোগানের মধ্যে লুকিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে আলাদা করার কথা।
দিলীপের সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, মনে রাখতে হবে, ‘জয় বাংলা’ শেখ মুজিবুর রহমানের স্লোগান। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম বেতার ভাষণে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ব্যবহার করেছিলেন।
এখনও বাংলাদেশে এটি সমানভাবে রাজনৈতিক স্লোগান হিসাবে ব্যবহার হয়। সেই স্লোগান এখন কেন মাননীয়া ব্যবহার করছেন তা মানুষ বুঝতে পারছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য
তবে জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহারে কোনও অন্যায় দেখছেন না তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘একটা সময়ে দুই বাংলাই একসঙ্গে ছিল। এখনও দুই বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য সবকিছুতে দারুণ মিল। সেই হিসেবে স্লোগানেও মিল থাকাটা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য আর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। স্লোগানের মধ্যে গ্রেটার বাংলাদেশ বানানোর লক্ষ্য খোঁজার পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে। আর আছে বাংলার মানুষের সমর্থন না পাওয়ায় বিজেপি নেতাদের হতাশা।’ আনন্দবাজার।
এসএস