ইন্দোনেশিয়ায় শরণার্থীশিবির থেকে ‘উধাও’ ৩০০ রোহিঙ্গা

ইন্দোনেশিয়ার একটি শরণার্থীশিবির থেকে অন্তত ৩০০ রোহিঙ্গা নিখোঁজ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তা ও কয়েকটি সূত্র বলছে, প্রতিবেশী মালয়েশিয়ায় এসব রোহিঙ্গাকে পাচার করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
ইন্দোনেশিয়ার উত্তর উপকূলের লোকসুমাওয়ে শহরে অবস্থিত ওই শরণার্থীশিবিরে এখন মাত্র ১১২ জন শরণার্থী রয়েছেন। গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখানে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা।
মিয়ানমার থেকে আসা এসব রোহিঙ্গা এখন কোথায় অবস্থান করছেন, সে সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা জাতিসংঘের কাছে কোনো তথ্য নেই। তাদের আশঙ্কা, এসব রোহিঙ্গা পাচারকারীদের হাতে পড়তে পারেন। তাদের মালাক্কা প্রণালি দিয়ে মালয়েশিয়ার দিকে নিতে পারে পাচারকারীরা।
লোকসুমাওয়ের রোহিঙ্গা টাস্কফোর্সের প্রধান রিদওয়ান জলিল বলেন, ‘তারা কোথায় গেছে আমরা জানি না। পালানোর কোনো সুযোগ পেলেই তারা পালিয়ে যায়। কারণ, এটাই তাদের লক্ষ্য।’
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার হয়ে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে হাজারো রোহিঙ্গা পাচারকারীদের হাতে অর্থ তুলে দিয়ে শরণার্থীশিবির থেকে পালানোর চেষ্টা করেছে। তাদের লক্ষ্য থাকে ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়া।
সম্প্রতি লোকসুমাওয়ে শহর থেকে কয়েক শ কিলোমিটার দূরে মেডান শহরে লোকসুমাওয়ে শিবিরের ১৮ জন রোহিঙ্গা ও ১২ জনের বেশি পাচারকারী পুলিশের হাতে আটক হন।
শরণার্থীশিবির থেকে পালানো রোহিঙ্গাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে পার্শ্ববর্তী মুসলিম–অধ্যুষিত দেশ মালয়েশিয়াতে পৌঁছানোর। বর্তমানে মালয়েশিয়াতে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন। সেখানে তাদের কাজ করার অনুমতি না থাকলেও কম বেতনে অবৈধ নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হন। অনেকেই পাচারকারীদের হাতে অর্থ দিয়ে পরিবারকে সেখানে আনার চেষ্টা করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ইন্দোনেশিয়ার শরণার্থীদের বারবার করে শরণার্থীশিবির ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছিল। সংস্থাটির মুখপাত্র মিত্রা সুরিওনো বলেছেন, ‘বিপদ ও ঝুঁকির বিষয়টি তাদের বারবার বলা সত্ত্বেও তারা তা মানেনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়ার তাদের আত্মীয়স্বজন রয়েছে। এটিও আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ার অন্যতম কারণ।’
অধিকার সংস্থাগুলো শরণার্থী পালানোর জন্য ইন্দোনেশিয়ার সরকারের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। গত মাসে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর শরণার্থীশিবিরের তদারকির দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়া হয়।
ইন্দোনেশিয়ার শরণার্থী নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান গিওতানওয়ের ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইস্কান্দর দেওয়ান তারা বলেন, ‘এ ঘটনার মূল কারণ হচ্ছে শরণার্থীশিবিরগুলোর নিরাপত্তার অভাব। সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কাছে দায়িত্ব দিলেও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ওই সংস্থাটিকে সরকারের সহযোগিতা করা উচিত।’
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইন্দোনেশিয়ার অফিসের পরিচালক উসমান হামিদ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যতক্ষণ ইন্দোনেশিয়ার সীমানায় রয়েছে, ততক্ষণ তাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।’
সূত্র: আলজাজিরা
এসএমডব্লিউ