মদ বিক্রিতে রেকর্ড, সাড়ে তিন মাস আগেই লক্ষ্যপূরণ

২০২০-২১ অর্থবছরে পশ্চিমবঙ্গের আবগারি দফতরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। সময় শেষের সাড়ে তিন মাস আগেই (ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে) সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এতে ভূমিকা রেখেছে মদ বিক্রি। অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই বেশি আয় হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, গত পাঁচ বছর ধরেই আবগারি দফতরের ওপরে রাজ্যের আর্থিক ব্যবস্থার ভরসা বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। পরিস্থিতি বদলে যায় ২০১৭ সাল থেকে। ওই বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই রাজ্যে দেশি ও বিলেতি মদের মূল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ শুরু করে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস করপোরেশন (বেভকো)।
বেভকো কাজ শুরুর পর থেকে আবগারি দফতরের আয় লাফিয়ে বেড়েছে। প্রথম বছর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দফতরের রাজস্ব আয় হয় ৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ১০ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। সেবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা।
প্রতিবছর আয় লক্ষ্য ছাড়াচ্ছে কীভাবে— এ প্রশ্নের জবাবে দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমরা মদ্যপানে উৎসাহ দিচ্ছি এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। আসলে গত কয়েক বছরে রাজ্যে অবৈধ মদ বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো গেছে। যার প্রভাব দেখা গিয়েছে বৈধ মদ বিক্রি বৃদ্ধিতে। দফতরের এ উদ্যোগের ফলে এক দিকে যেমন মদ থেকে বিষক্রিয়ার মতো ঝুঁকি কমেছে তেমনই সরকারের কর ফাঁকি দেওয়াও কমেছে।
কর্মকর্তারা দাবি করেন, সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ায় সার্বিকভাবে মদ বিক্রি বেড়েছে। করোনাকালে অনলাইনে মদ বিক্রিও রাজস্ব আদায়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনলাইনে ক্রেতার সংখ্যা এখন প্রায় দেড় লাখ। সেই সঙ্গে সস্তায় দেশি মদের অনেক ব্র্যান্ড সম্প্রতি চালু হয়েছে এ রাজ্যে। ৩০০ মিলিলিটার মদের দাম সর্বনিম্ন ২৩ টাকা রাখা হয়েছে।
আবগারি দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক মাসে দেশি মদের বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ, সস্তায় বৈধ দেশি মদ পেয়ে অনেকেই চোলাইয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পানীয় থেকে সরে আসছেন। তবে রাজ্যে মদ বিক্রি বাড়লেও মদ্যপের সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি। প্রকৃতপক্ষে এখন মদ বিক্রির বেশিটাই হচ্ছে বৈধ পথে। আর তাতেই রাজ্যের কোষাগারে আসছে টাকা।
মদের বিক্রি বাড়াতে বিতরণ ব্যবস্থা (ডিস্ট্রিবিউশন চেন) শক্তিশালী করার কথা ভাবছে আবগারি দফতর। বেভকো’র গুদাম থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে মদ পৌঁছনোর সুষ্ঠু শৃঙ্খল গড়ে তুলতে আর্থিকভাবে বলিষ্ঠ ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগের কথা ভাবছে। এ জন্য ইতিমধ্যেই আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছে।
আবগারি দফতর বলছে, এমন সংস্থাকেই পরিবহন ও বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হবে, যার ভারতের যেকোনো রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মদ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসায় কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। শর্তে আরও বলা হয়েছে, গত তিন বছরে কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করতে হবে।
আরএইচ