কাশ্মিরের ক্ষমতা দখলে আসন পুনর্বিন্যাস চায় বিজেপি, তীব্র বিতর্ক

ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মিরে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের জন্য গঠিত আসন পুনর্বিন্যাস বিষয়ক একটি কমিশন উপত্যকায় বিধানসভার আসন বাড়ানোর বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মিরের জন্য গঠিত আসন পুনর্বিন্যাস কমিশন কাশ্মিরে একটি বিধানসভা আসন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে জম্মুতে তারা ৬টি আসন বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এরপরই রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিধানসভার আসন বাড়ানোর বিষয়ে পুনর্বিন্যাস কমিশনের প্রস্তাব একমাত্র বিজেপি ছাড়া কাশ্মিরের বাকি সব রাজনৈতিক দলই প্রত্যাখ্যান করেছে। উপত্যকার রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, জম্মুতে আসন বৃদ্ধির মাধ্যমে আসলে জম্মু-কাশ্মিরে ক্ষমতা দখলের ছক কষছে বিজেপি। বিজেপির সেই স্বপ্ন পূরণ সহজ করার বিষয়টি মাথায় রেখেই হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পর সোমবারই প্রথম বৈঠকে বসেছিলেন আসন পুনর্বিন্যাস কমিশনের সদস্যরা। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জনসংখ্যার বিন্যাসের ওপরে ভিত্তি করে জম্মুতে ছয়টি আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে আগামী দিনে জম্মুর আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৩টিতে।
অন্যদিকে খসড়া প্রস্তাবে কাশ্মিরের একটি আসন বাড়ানোর সুপারিশ করায় সেখানে মোট আসন হবে ৪৭টি। তবে এর মধ্যে আবার ৭টি আসন তফসিলি জাতি ও ৯টি আসন জনজাতির জন্য সংরক্ষিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এতেই সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক।
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ১৯৯৪-৯৫ সালে সর্বশেষ জম্মু-কাশ্মিরে আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল। প্রায় ২৫ বছর পরে নতুন করে উপত্যকায় আসন পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতো দিন যারা কাশ্মিরে বেশি আসনে জয়লাভ করতো তারাই জম্মু-কাশ্মির শাসন করে এসেছে। আর আসন পুনর্বিন্যাস বিষয়ক ওই কমিশনের মাধ্যমে সেই চিত্রই পাল্টাতে চায় বিজেপি।
কারণ বিজেপির মূল জনসমর্থন হলো জম্মুতে। সেই জম্মুতে যদি বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তা হলে কেবল মাত্র হিন্দু ভোটের ওপরে ভর করে জম্মু-কাশ্মির শাসন করতে সক্ষম হবে বিজেপি। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই কারণেই পরিকল্পিত ভাবে জম্মুতে এক ধাক্কায় এতোগুলো আসন বাড়ানো হয়েছে।
অবশ্য ওই খসড়া প্রস্তাবের বিরোধিতায় সরব হয়েছে কাশ্মিরের সব দলই। উপত্যকার মূল দুই রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও মেহবুবা মুফতির দল পিডিপি ওই প্রস্তাবকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে।
— Omar Abdullah (@OmarAbdullah) December 20, 2021
কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও এনসি নেতা ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘খসড়া এই প্রস্তাব কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যেভাবে জম্মুতে ৬টি ও কাশ্মিরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট যে, ২০১১ সালের আদমশুমারিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের মর্যাদাও কেড়ে নেয় ভারতের নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহালের পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল কাশ্মিরের রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু শুরু থেকেই আসন পুনর্বিন্যাস সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষপাতী মোদি সরকার।
বিরোধীদের অভিযোগ, আসন পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে আসন বাড়িয়ে নিয়ে জম্মু-কাশ্মিরের নির্বাচনে জয়ের কৌশল নিয়েছে বিজেপি। মূলত সোমবারের খসড়া প্রস্তাবে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
— Mehbooba Mufti (@MehboobaMufti) December 20, 2021
কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির অভিযোগ, ‘কাশ্মিরে একক ভাবে ক্ষমতা দখলের বিষয়ে বিজেপির যে রাজনৈতিক স্বপ্ন রয়েছে তা চরিতার্থ করতেই ওই কমিশন গঠন করা হয়েছিল এবং সোমবার সেই চেনা ছকে হেঁটেই রিপোর্ট দিয়েছে তারা।’
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ আদমশুমারিকে ভিত্তি করে জনসংখ্যার পরিবর্তনের ওপর কোনো অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি নির্ধারিত হয়ে থাকে। মূলত এই কাজটি করে থাকে ডিলিমিটেশন কমিশন।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কাশ্মিরের জনসংখ্যা ৬৮ লাখের বেশি, অন্যদিকে জম্মুর জনসংখ্যা ৫৩ লাখ। অর্থাৎ জম্মুর তুলনায় কাশ্মিরের জনসংখ্যা ১৫ লাখেরও বেশি।
টিএম