হংকংয়ে তিয়েনআনমেন হত্যাকাণ্ডের ভাস্কর্য উচ্ছেদ

চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো হত্যাকাণ্ডের স্মরণে হংকংয়ে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘পিলার অব শেম’ ভেঙে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) হংকংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ভাস্কর্যের মাধ্যমেই গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের সেখানে স্মরণ করা হতো। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
১৯৮৯ সালে চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের স্মরণে ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ে এই ভাস্কর্যটি বানানো হয়েছিল। মূলত গুলিতে নিহত আন্দোলনকারীদের মৃতদেহ স্তুপ করে রাখার নকশায় এটি নির্মিত হয়।

বিষয়টি চীনের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। দেশটিতে প্রকাশ্যে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে নিহতদের স্মরণ করা বা আলোচনাও নিষিদ্ধ। আর এ কারণেই হংকংয়ের প্রধান এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়া হছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, তিয়েনআনমেন স্কয়ারে চীনা নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত গণতন্ত্রপন্থিদের স্মরণে ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ে নির্মিত এই ভাস্কর্যের নাম ‘পিলার অব শেম’ বা লজ্জা স্তম্ভ। ডেনমার্কের স্থপতি জেনস গালশিয়েট এটি তৈরি করেছিলেন। ২৬ ফুট উচু এবং দুই টন ওজনের এই ভাস্কর্যে ৫০ জন ছাত্রের মৃত্যুর প্রতীকী চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। চীনে গণতন্ত্রপন্থিদের এক অন্যতম স্মারক ছিল স্থাপত্যটি।
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বুধবার হঠাৎ করেই ক্রেন নিয়ে ‘পিলার অব শেম’ ভাস্কর্যের সামনে উপস্থিত হয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপর কেউ যেন সামনে আসতে না পারে এজন্য ভাস্কর্যটিকে প্রথমে ঘিরে দেওয়া হয়।

এরপর সাদা কাপড় দিয়ে ক্রেনের সাহায্যে পুরো স্ট্যাচুটি ঢেকে দেওয়া হয়। পরে ক্রেনের সাহায্যে সেটির ওপরের অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ভাঙা অংশসহ পুরো ভাস্কর্যটি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে বুধবার রাতে ‘পিলার অব শেম’ সরানোর কাজ শুরু হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা জানায়, গত সপ্তাহে ভাস্কর্যটি নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে এটি সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবের পক্ষে অধিকাংশ মানুষ ভোট দেন। এছাড়া এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থও দেখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে নিহত বিক্ষোভকারীদের স্মরণে নির্মিত ‘পিলার অব শেম’ সরিয়ে নেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ছাত্ররা খুশি নয়। একইভাবে খুশি নন স্থপতি জেনস গালশিয়েটও।

টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, ভাস্কর্যটি তার নির্মিত। স্থাপত্যের ক্ষতি করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। শুধু তাই নয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্ট্যাচুটি ফেরতও চেয়েছেন তিনি।
টিএম