বাইডেনের প্রথম বৈশ্বিক পরীক্ষা মিয়ানমার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছেন জো বাইডেন। মার্কিন এই প্রেসিডেন্টের জন্য প্রথম পরীক্ষা হিসেবে হাজির হয়েছে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণ। তবে এই পরীক্ষায় উতড়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সামনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বেশ কিছু পথ খোলা রয়েছে।
মিয়ানমারকে গণতন্ত্রে ফেরাতে দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক সহায়তা কাটছাঁট এবং সেনা জেনারেলদের কালো তালিকাভূক্ত করতে পারেন জো বাইডেন। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী পরিচালিত বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন তিনি; যা হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
সোমবার মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধান ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি ও আইনপ্রণেতাদের আটকের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট সোমবার এক বিবৃতিতে গণতন্ত্রের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারের পাশাপাশি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের হুমকিও দিয়েছেন।
এক দশক আগে মিয়ানমারের সেনা জেনারেলরা গণতান্ত্রিক সংস্কারের সূচনা এবং কয়েকশ’ রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার পর ওবামা প্রশাসন দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেও বাইডেন প্রশাসন আবারও তা পুনর্বহালের হুমকি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেছেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা করবে তার প্রশাসন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংসহ দেশটির শীর্ষ চার কমান্ডারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন।
মার্কিন অর্থ দপ্তরের সাবেক নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা পিটার কুকিক বলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন বাইডেন। মিয়ানমারে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় বাইডেন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশও দিতে পারেন।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসন ‘মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান কীভাবে দেখছে’ এবং তারা ‘কী দেখতে চায়’ সেটি নির্ধারণ করতে পারবে। সেই অনুযায়ী দেশটির বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে ওয়াশিংটন। পিটার কুকিক বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ইমারজেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্টের (আইইইপিএ) আওতায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী আদেশের ব্যবহার করতে পারেন বাইডেন।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যবিষয়ক এক পরামর্শক বলেন, নেইপিদোর সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে চাওয়া অনেকেই বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করতে পারেন।
তিনি বলেন, তবে অনেক বিনিয়োগকারী অভ্যুত্থানের হোতা এবং ক্ষমতা নেওয়ার পর সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আরও বেশি টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন জানাতে পারেন। এর মাধ্যমে তারা একটি সতর্কবার্তাও দিতে চান যে, মিয়ানমারের নতুন প্রশাসনের বৈধতা নেই।
তবে দেশটির সাবেক কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মিয়ানমারের সেনা জেনারেলদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা নেওয়ার খুব বেশি কিছু নেই। দেশের বাইরে এই জেনারেলদের সম্পত্তি বা স্বার্থ খুব কমই আছে। যে কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তার প্রভাব জেনারেলদের ওপর জোরাল হবে না।
সেনাবাহিনী পরিচালিত মিয়ানমারের প্রধান দুই জায়ান্ট কোম্পানি মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংস লিমিটেড (এমইএইচএল) এবং মিয়ানমার ইকোনমিক করপোরেশন (এমইসি)। এই দুই কোম্পানির ব্যাংক, গহনা, তামা, টেলিকম এবং পোষাকসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী মিয়ানমার সেনাবাহিনী পরিচালিত স্থানীয় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিয়ানমারবিষয়ক প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনায় ২০১৮ সালে এসব কোম্পানির ওপর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিলেও পরবর্তীতে তা আর হয়নি। বরং তাদের সঙ্গে কাজ করেছে। তিনি বলেন, কিন্তু অর্থ দপ্তর চাইলে সেসব নিষেধাজ্ঞা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে পারে। এবং তাদের সেটি করা উচিত।
সূত্র : রয়টার্স।
এসএস