হেগের আদালতে ইরানের পক্ষে রায়

ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি জ্যাকোপা থেকে বেরিয়ে গিয়ে দেশটির ওপর যেসব অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তার বৈধতা খতিয়ে দেখবেন আন্তর্জাতিক আদালত। এছাড়া এই ১৯৫৫ সালে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে অর্থনৈতিক চুক্তি হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে তা কী পরিমাণ লঙ্ঘন হয়েছে তা ও পর্যালোচনা করা হবে।
স্থানীয় সময় বুধবার নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের আন্তর্জাতিক আদালতের প্রধান বিচারপতি আবদুলকাউই ইউসুফ এ বিষয়ক এক শুনানি শেষে বলেন, ‘আমেরিকা এ বিচারের শুনানি স্থগিত করতে যে আবেদন জানিয়েছিল বেশিরভাগ বিচারক তাকে ন্যায়সঙ্গত মনে করেননি। তারা বরং আমেরিকার বিরুদ্ধে ইরানের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সম্মত হয়েছেন।’
ইরানকে পরমাণু প্রকল্প থেকে বিরত রাখতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া- জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এই ছয় স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ২০১৫ সলে পরমাণু চুক্তি বা জ্যাকোপা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তির শর্ত ছিল - ইরান ধীরে ধীরে পরমাণু প্রকল্প থেকে সরে আসবে- এর পরিবর্তে দেশটির বিরুদ্ধে যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে- সেগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান এবং ইরানের ওপর নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ট্রাম্পের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে ইরান সরকারের আর্থিক হিসাবগুলো জব্দ হয়ে যায়, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী আমদানিতেও সমস্যায় পড়ে ইরান।
এরপর ওই বছরই জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক আদালতে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে ইরান। দেশটির সরকারের পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে সে সময় বলেছিলেন, মার্কিন সরকার তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে ১৯৫৫ সালে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক আদালত ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার একতরফা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিশেষ করে ইরানে মানবিক পণ্য সরবরাহকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন আদালত।
কিন্তু সে রায় বাস্তবায়ন না করে আমেরিকা উল্টো এই বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারের শুনানি স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়েছিল। বুধবারের আদেশের মধ্যে দিয়ে কার্যত আমেরিকার আবেদন নাকচ করে ইরানের পক্ষে রায় দিলেন আন্তর্জাতিক আদালত।
এসএমডব্লিউ