ধর্ম অথবা শিক্ষার যেকোনও একটি বেছে নিতে বাধ্য করছে হিজাব নিষিদ্ধ

আয়েশা ইমতিয়াজ। একজন ধর্মপ্রাণ ভারতীয় মুসলিম তরুণী। হিজাব পরাকে ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর প্রতি ভক্তি প্রকাশ বলে মনে করেন তিনি। আয়েশা বলেন, হিজাব পরা মেয়েদের কলেজ থেকে বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপটি এক ধরনের অপমান; যা তাকে ধর্ম এবং শিক্ষার মধ্যে যেকোনও একটি বেছে নিতে বাধ্য করবে।
হিজাব নিষিদ্ধ ঘিরে শুরু হওয়া প্রতিবাদ-আন্দোলনের কেন্দ্র ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের উদুপি জেলার ২১ বছর বয়সী এই তরুণী বলেন, মাথায় স্কার্ফ পরার জন্য কলেজ কর্মকর্তারা আমাকে শ্রেণিকক্ষ থেকে চলে যেতে বলায় যে অপমানিত বোধ করেছি, তা আমার মূল বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমার ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এবং এটি এমন এক জায়গায় করা হয়েছে, যে জায়গাকে আমি শিক্ষার আঁতুড়ঘর হিসেবে মনে করেছিলাম।
উদুপির মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল কলেজে পাঁচ বছর পড়াশোনা করেছেন তিনি। বলেন, এটি অনেকটা আমাদের ধর্ম অথবা শিক্ষার মধ্যে যেকোনও একটি বেছে নিতে বলার মতো। কিন্তু এটি ভুল। আয়েশা বলেন, হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে আন্দোলন করা কয়েকজন মুসলিম তরুণীকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তারা এখন বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
কলেজ কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের হিজাব পরার অনুমতি রয়েছে এবং কেবলমাত্র শ্রেণিকক্ষের ভেতরে তাদের সেটি খুলে রাখতে বলা হয়। ধর্মীয় দিক থেকে কর্ণাটকের সংবেদনশীল উপকূলীয় তিনটি জেলার একটি উদুপি; যা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শক্ত ঘাঁটি।
কর্ণাটকের এই বিতর্ক দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের মাঝে ভয় এবং ক্ষোভ বৃদ্ধি করেছে। তারা বলেছেন, তারা যা চান তা পরার স্বাধীনতা দিয়েছে দেশের সংবিধান। হিজাব নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেশটিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মাসে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা এবং তামিলনাড়ুর চেন্নাইতে অনেক মুসলিম বিক্ষোভ করেছেন।
গত সপ্তাহে হিজাব নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মুসলিম ছাত্রীদের করা একটি পিটিশন কর্ণাটকের হাই কোর্টের একজন বিচারক আদালতের বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়েছেন। এই বিষয়টিকে ভারতীয় সংবিধানে নিশ্চয়তা পাওয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার পরীক্ষা হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিসরেও ঘনিষ্ঠভাবে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কার্যালয় আইআরএফ বলছে, হিজাব নিষিদ্ধের বিষয়টি ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন। এটি নারী ও মেয়েদের অবমাননা এবং প্রান্তিককরণ করে ফেলে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই মন্তব্যের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক এবং এই বিষয়টি এখন বিচারিক পর্যালোচনায় রয়েছে।
হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী ইমতিয়াজ এবং অন্য ছয়জন মুসলিম তরুণী বলেছেন, তারা কট্টরপন্থী কিছু হিন্দু শিক্ষার্থী, এমনকি কিছু বন্ধুর মুখোমুখি হয়েও ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। ইমতিয়াজ বলেন, আমাদের নিজেদের বন্ধুরাও আমাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, এটি দেখা সত্যিই বেদনাদায়ক। তারা বলছে, তুমি হিজাব পরলে আমার সমস্যা আছে... এটি আমাদের বন্ধন এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস