সেনা প্রত্যাহারের পর পাশ্চাত্যের দেশগুলোকে বিদ্রুপ রাশিয়ার

গত প্রায় দু’মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাঁধানোর যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিল, ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার পাশ্চাত্যের দেশগুলোর এই প্রচারণায় ‘পানি ঢেলে দিয়েছে’ বলে বিদ্রুপ করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মারিয়া জাকারোভা বলেন, ‘বিশ্বের ইতিহাসে আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ আজ, ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববাসী দেখল পশ্চিমা দেশগুলোর যুদ্ধ বিষয়ক প্রচার-প্রচারণা কত করুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
‘কোথাও একটি গুলিও চলেনি, কিন্তু ইউরোপ যে কী পরিমাণ লজ্জা পেয়েছে— তা আমরা সবাই অনুভব করতে পারছি।’
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশীরাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বৃদ্ধি পায় এই উত্তেজনা।
গত দুই মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন ছিল ১ লাখেরও বেশি রুশ সেনা। সীমান্তের পাশাপাশি কৃষ্ণ সাগরের দ্বীপ ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার অন্যতম মিত্র দেশ বেলারুশে বাড়ানো হয়েছিল রুশ সেনা উপস্থিতি।
ইউক্রেন যেন ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়, মূলত সেজন্য দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছিল রাশিয়া। কারণ, ১৯৪৯ সালে গঠিত ন্যাটোকে রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপিত্যবাদের বিরোধী।
কিন্তু এই সেনা মোতায়েন ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে। এক পক্ষের সেনা মোতায়েন ও অপর পক্ষের উত্তেজনায় রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সদস্যরা বেশ কয়েকবার হুমকি দেন— যদি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালায়— সেক্ষেত্রে নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক সংকটের মুখে পড়বে রাশিয়া।
এর মধ্যেই বুধবার ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কয়েকটি সৈন্যদল প্রত্যাহার করে নেয় রাশিয়া। সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় ক্রিমিয়া থেকেও।
তবে রাশিয়া এই সেনা প্রত্যাহার অব্যাহত রাখবে কিনা তা নিয়ে এখনও সংশয়ে আছে ইউক্রেন ও ন্যাটো। ন্যাটোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বুধবার দেশটির বেতার সংবাদমাধ্যম এলবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে বলেন, ‘রাশিয়া যদিও বলেছে, তার আগ্রাসনের কোনো পরিকল্পনা নেই, তবে আমরা চাই সীমান্ত থেকে যেন সব রুশ সৈন্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।’
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সীমান্ত থেকে যদি সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, কেবল তাহলেই আমরা বিশ্বাস করব— রাশিয়ার হামলা করার কোনো পরিকল্পনা নেই।’
সূত্র: এনডিটিভি
এসএমডব্লিউ