ডিজিটাল মার্কেটিং কী, ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন?
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গত বছরের শেষে এসে আগামী পাঁচ বছরে বাজারে কোন চাকরির চাহিদা বাড়বে ও কোন চাকরির চাহিদা কমবে- সে বিষয়ে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘ফিউচার অব জব সার্ভে- ২০২০’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে যেসব চাকরির চাহিদা বাড়বে, তার মধ্যে শীর্ষ পাঁচে স্থান পেয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং। সুতরাং ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ কেমন- তার আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার আগে ডিজিটাল মার্কেটিং কী- সে সম্পর্কে একটি ধারণা নেয়া যাক।
ডিজিটাল মার্কেটিং কী ও এর গুরুত্ব
একুশ শতকে এসে প্রথাগত মার্কেটিংয়ের স্থান দখল করে নিচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। বিশ্বজুড়ে তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিকাশ যেমন ত্বরান্বিত হচ্ছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিজিটাল মাধ্যমে বাজারজাতকরণ। সমীক্ষা বলছে, গত ৫ বছরে ডিজিটাল বিপণনের জন্য চাকরির সুযোগ বেড়েছে ৮০০ শতাংশ।
সাধারণত অর্থে একটি পণ্য বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিক্রি করার কৌশলকেই মার্কেটিং বলা হচ্ছে। আর ঠিক এই কাজটি যখন ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে করা হচ্ছে, তাকেই বলা হয় ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’। তবে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে সবচেয়ে বিশেষত্ব দিয়েছে ডেটা বা উপাত্তের ব্যবহার। এত সূক্ষ্মভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন বাইট ডেটা সংরক্ষণ এবং মুহূর্তেই তা বিশ্লেষণ করতে পারার দক্ষতা ডিজিটাল চ্যানেল ছাড়া অন্য কোনও মাধ্যমে সম্ভব নয়।
বলা হচ্ছে, আগামী দিনের পৃথিবী হচ্ছে ‘ইন্টারনেট অব থিংকস’ বা আইওটি’র পৃথিবী। অর্থাৎ, আপনার ব্যবহৃত এমন কোনও বস্তু থাকবে না, যা ইন্টারনেটের আওতার বাইরে থাকবে। ওয়াশরুমের পানির ট্যাপ থেকে শুরু করে কিচেনের গ্যাসের চুলা- সব কিছুতেই যুক্ত থাকবে ইন্টারনেট। বাড়বে ডেটার ব্যবহার, বাড়বে ডিজিটাল মার্কেটারের চাহিদা।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-
১. ইমেল মার্কেটিং
২. পে-পার ক্লিক বা পিপিসি
৩. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও
৪. ডিসপ্লে বিজ্ঞাপন
৫. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
৬. কনটেন্ট মার্কেটিং
৭. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
৮. অন লাইন পাবলিক রিলেশন
৯. ইউটিউব মার্কেটিং
এর বাইরেও আরও অনেক পদ্ধতির কথাই বলা যাবে।
ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন ডিজিটাল মার্কেটিং?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং কেমন হবে এবং কীভাবে শুরু করা যায়। ডিজিটাল মার্কেটিং মূলত একটি বিশাল সেক্টর। আপনি যদি মনে করেন, এখানে এসে রাতারাতি সফলতা অর্জন করে ফেলবেন, সেটা ভুল। এই সেক্টরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষতা। আপনি যত দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন, তত দ্রুত এখানে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। আপনাকে হতে হবে পরিশ্রমী। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অনেকগুলো ক্ষেত্রের মধ্যে যেকোনও একটি বেছে নিয়ে সেটার ওপর আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। তবে ভালো মানের ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে এর সব মার্কেটিং সেকশন সম্পর্কেই পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক।
সৃজনশীলতা এবং বিশ্লেষণী দক্ষতাই এখানে আপনাকে সফলতা এনে দিবে। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে শুধু দেশেই বাজারেই নয়, ডিজিটাল মার্কেটিং দক্ষতা দিয়ে আপনি দেশে বসেই বিদেশের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং একটি বড় কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি করেছে। আর ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের রয়েছে বিপুল চাহিদা। এর বাইরে আপনার নিজের ব্যবসাতেও কাজে লাগাতে পারেন এই দক্ষতা।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম একটি সেক্টর হচ্ছে এসইও। এখন দিনেদিনে মানুষ নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট, ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট খুলছে, আর সেসব ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ভিজিটর। অর্গানিকভাবে গুগলসহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন থেকে ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনার কাজটি করে দেয় এসইও।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ফেসবুক মার্কেটিং ইত্যাদির পেছনে টাকা খরচ করে নিজের ব্যবসার প্রচার বাড়িয়েই চলছে। তেমনি ফেসবুকের পাশাপাশি অন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মার্কেটিংয়ের কাজ জানলেও আপনার পক্ষে ভালো পরিমাণ উপার্জন সম্ভব। দক্ষতা থাকলে ও কৌশল বুঝলে এ সেক্টরে মাসে লাখ টাকা উপার্জন খুবই স্বাভাবিক বিষয়। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষতা অর্জন করে আপনি চাইলে দেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন, বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে পারেন, কিংবা হতে পারেন এ বিষয়ের প্রশিক্ষক। এর মধ্য থেকে একাধিক কাজও আপনি একসঙ্গে করতে পারেন।

যে কৌশলগুলো জানা দরকার
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব কিংবা ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং কেমন তা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এর জন্য আপনার প্রয়োজন দৃঢ় ইচ্ছা, দক্ষতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা এবং সেইসঙ্গে প্রস্তুতি। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্যারিয়ার গড়তে এ বিষয়ে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি আপনাকে আরও কিছু কাজ করতে হবে:
১. সোশ্যাল মিডিয়াকে সঠিকভাবে কাজে লাগান
২. লিংকডইন প্রোফাইল তৈরি করুন
৩. ব্লগিং শুরু করুন
৪. মেন্টর খুঁজে বের করুন
৫. নিজেকে আপ-টু-ডেট রাখুন
৬. নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করুন
৭. নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করুন
৮. সম্ভব হলে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে টিউটোরিয়াল দিন
শেষ কথা হচ্ছে, যেকোন কিছুতেই ভালো করতে চাইলে, সেটা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। যেহেতু জনপ্রিয় এবং দ্রুত বর্ধনশীল একটি পেশা, তাই এখানে প্রতিযোগিতা আছে। তবে সে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার একটিই উপায়- তা হচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে শেখার আগ্রহ।
লেখক: গুগল-সার্টিফায়েড ডিজিটাল মার্কেটিং স্পেশালিস্ট ও কৌশলবিদ
