উদ্ভিদবিজ্ঞানে পড়ে চাকরির সুযোগ কেমন?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাকরির বাজার পরিবর্তন হচ্ছে। আগের মত যেকোন একটি বিষয় পড়াশোনা করলেই চলবে না। আগে ভাগে জেনে নিতে হবে, কোন বিষয় পড়াশোনা করলে কর্ম জীবনে সুযোগ সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশ কিছু চাহিদা সম্পন্ন বিষয়ে পড়ানো হয়। এরমধ্যে অন্যতম উদ্ভিদবিজ্ঞান।
উদ্ভিদবিজ্ঞানে কেন পড়ব?
দেশের জনসংখ্যা স্বাধীনতার পর দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। এরপরও সবধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আমাদের বড় ধরনের দুর্ভিক্ষ, খাদ্যাভাবের মধ্যে পড়তে হয়নি। কারণ এজন্য কাজ করছেন কয়েক হাজার কৃষিবিদ, উদ্ভাবক ও কৃষক।
মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা এইসব মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে জীববিজ্ঞানের যে শাখাটি, তা হলও উদ্ভিদবিজ্ঞান। বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে উদ্ভিদ গবেষণায় এই বিভাগের গুরুত্ব অন্যতম। একটি কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া বাংলাদেশের জন্য যেমন একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মত রূঢ় বাস্তবতায় এটা দিনদিন আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে উদ্ভিদবিজ্ঞানের মত মৌলিক বিষয়ে গবেষণা ও উচ্চতর অধ্যয়ন বাংলাদেশের জন্য অতব প্রয়োজনীয়।
এছাড়াও জলবায়ু, পরিবেশ, মানুষ - সবকিছুর সঙ্গেই উদ্ভিদ জড়িত। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রসার ঘটাতে হবে। খাদ্য গুণাগুণ ঠিক রাখা, প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া ফসল, জলবায়ুর পরিবর্তন রোধসহ মানবজীবনের প্রায় সব বিষয়েই উদ্ভিদবিজ্ঞান জড়িত। এ জন্য উদ্ভিদবিজ্ঞানীও প্রয়োজন। তাই দিন দিন এই বিষয়ের শিক্ষার্থীদের নিত্য নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
এমনকি শস্য উৎপাদন, অ্যাগ্রোস্টলজি, ইকোনমিক বোটানি, হর্টিকালচার, লাইকেনোলজি, মাইকোলজি, অর্কিটোলজি, ফ্যানোলজি, প্লান্ট বায়োটেকনোলজি, জিনোম এডিটিং, বন, ফুড কোম্পানি, সিড ব্যাংকের মতো আরও অনেক ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, আরও হবে।
কী পড়বো, কোথায় পড়বো?
মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্ল্যান্ট ব্রিডিং, বায়োটেকনোলজি এন্ড প্ল্যান্ট জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইটোজেনেটিক্স, ইকোলজি এন্ড এনভায়রনমেন্ট, লিমনোলজি অর ওয়াটার বায়োলজি, ফাইকোলজি, ট্যাক্সোনমি, প্ল্যান্ট প্যাথলজি, প্ল্যান্ট ফিজিওলজি এমনই কতগুলো বিষয়ের সমষ্টি হচ্ছে বোটানি তথা উদ্ভিদবিজ্ঞান।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের সুবিধা হলও উচ্চতর ক্ষেত্রে এর যেকোনটি বিষয় নিয়েই কাজ করার সুযোগ থাকে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই উন্নয়নশীল দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ও যুগোপযোগী ব্যবহার দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য খুবই জরুরি।
তাছাড়া দেশের প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে স্নাতক সম্মান, মাস্টার্স, এম ফিল ও পিএইচডি করার সুযোগ আছে। এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সবগুলো কলেজে এই বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার সুযোগ আছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান ইউনিটের অধীনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ইন্টারমিডিয়েটে জীববিজ্ঞান বিষয় পাঠ্যতালিকায় থাকা বাধ্যতামূলক। এম,এস; এম ফিল, পিএইচডিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা করানো হয়। এবং দেশসেরা গবেষকদের সাথে রিসার্চ পেপার প্রকাশের সুযোগও থাকে এখানে।
এছাড়াও বিদেশে এই বিষয়ে পড়ে গবেষণার বড় সুযোগ আছে। উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে স্কলারশিপ নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকার বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে পিএইচডি সহ উচ্চতর গবেষণার সুযোগ। নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে রয়েছে উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ-
১। মাইক্রোবায়োলজি
২। বায়োকেমিস্ট্রি
৩। প্যান্ট ব্রিডিং
৪। বায়োটেকনোলজি এন্ড প্ল্যান্ট জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
৫। সাইটোজেনেটিক্স
৬। ইকোলজি এন্ড এনভায়রনমেন্ট
৭। লিমনোলজি অর ওয়াটার বায়োলজি
৮। ফাইকোলজি
৯। ট্যাক্সোনমি
১০। প্ল্যান্ট প্যাথলজি
১১। প্ল্যান্ট ফিজিওলজি।
চাকরি-বাকরির সুযোগ
বাংলাদেশ সরকারের অধীনে রয়েছে অনেকগুলো রিসার্চ ইন্সটিটিউট। সেসব ইন্সটিটিউটের প্রায় সবগুলোতেই ৩০% এর মত পদ শুধুমাত্র উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরদের জন্য বরাদ্দ থাকে।
বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ বনবিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (BARI), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (BRRI), বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (BTRI), বাংলাদেশ পারমাণবিক কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (BINA), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট (BJRI), বাংলাদেশ আখ গবেষণা ইন্সটিটিউট (BSRI) এরকম আরও বেশকিছু সরকারী ইন্সটিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে বোটানিস্টদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (IRRI) তে রয়েছে কাজ করার সুযোগ। এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ বন বিভাগ। ফরেস্ট অফিসার হিসেবেও এখানে সুযোগ পেতে পারেন।
এমনকি ওষুধ প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভিদবিজ্ঞানী ছাড়া চলবে না। সেখানে কাঁচামালের জন্য উদ্ভিদ লাগে। অন্যদিকে ইনসুলিনও ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি। সব ভেষজ ওষুধ তৈরি হয় উদ্ভিদ থেকে। উদ্ভিদবিজ্ঞান শুধু উদ্ভিদের ক্ষুদ্র একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। এর বিস্তৃতি অনেক বড়। আমাদের টেকসই প্রযুক্তির সাহায্যে এটাকে কাজে লাগাতে হবে দেশের কল্যাণে।