বিবিএ-এমবিএ পড়ে চাকরির সুযোগ কেমন?
বাংলাদেশের দেড় শতাধিক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পরিচিত বিভাগ বা অনুষদ হচ্ছে ব্যবসায় প্রশাসন। এ বিভাগের অধীনে পড়ানো হয় বিবিএ এবং এমবিএ প্রোগ্রাম। হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ইনস্টিটিউট খুলে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। যেমন ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট) সমূহও এই বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি দিয়ে থাকে। এ থেকেই ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রী ও প্রতিষ্ঠানের চাহিদা বা গুরুত্ব অনুমান করা যায়।
দেশিয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিবিএ ও এমবিএ নিয়ে এতো আগ্রহের উল্লেখযোগ্য তিনটি কারণ রয়েছে। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমকি কার্যক্রম, সামাজিক মূল্যায়ন ও চাকরিদাতাদের আগ্রহ-অন্যতম।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপরিধি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ব্যবসায় প্রশাসনে একজন স্নাতক (বিবিএ) তার কর্মজীবনে আকর্ষণীয় বেতন, উন্নত সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটিয়ে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদগুলোতে কাজের সুযোগ পান। কাজ করছেন বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায়। দেশের দারিদ্র বিমোচনেও রাখছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।
ভবিষ্যৎ গন্তব্য কোথায়?
বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পাশাপাশি অনেকে উদ্যোক্তা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
১। করপোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কাজের সুযোগ
করপোরেটের ধরন অনুযায়ী ব্যবসায় প্রশাসনের গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির অবস্থান নির্ধারিত হয়ে থাকে। বলে রাখা ভাল নানাবিধ বিষয়ের উপরে বিবিএ এবং এমবিএ ডিগ্রী প্রদান করা হয়। মার্কেটিং, ফাইন্যান্স, একাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ট্যুরিজম ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স, ইসলামিক ব্যাংকিং, রিয়েল এস্টেট ম্যানেজমেন্ট, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, একাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস, ম্যানেজমেন্ট ইনফেরমেশন সিস্টেমস, ফাইনান্সিয়াল টেকনোলজি (ফিনটেক), স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সহ যুগের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য বিষয়ের উপরও বিবিএ এবং এমবিএ ডিগ্রী দেওয়া হয়ে থাকে।
বিবিএ বা এমবিএ ডিগ্রী থাকলে ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাধারণত দ্রুত চাকরি হয়। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান গার্মেন্টস শিল্পে ব্যবসায় প্রশাসনের গ্র্যাজুয়েটদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
এছাড়াও দেশব্যাপী গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠিত সুপার শপগুলোতে ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীদেরই একচেটিয়া উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এমনকি ট্যুরিজম ও হোটেল ব্যবস্থাপনায় বিবিএ এবং এমবিএ ডিগ্রীধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ওষুধ শিল্প বাংলাদেশের আরেকটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত। ওষুধের বিপণন ও বাজারজাতকরণে নিয়োগপ্রাপ্ত হোন বিবিএ এবং এমবিএ গ্র্যাজ্যুয়েটরা।
যে সকল কোম্পানি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রথম পছন্দ বিবিএ-এমবিএ গ্র্যাজ্যুয়েট। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, এনজিও তাদের কর্মী এবং কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগ দিয়ে থাকে ব্যবসায় প্রশাসনের গ্র্যাজ্যুয়েটদের। সরকারের আয়কর বিভাগের নিয়োগেও প্রাধান্য পেয়ে থাকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের গ্র্যাজ্যুয়েটরা।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের আরেকটি বড় সুযোগ হচ্ছে যেকোনো মাধ্যমে শিক্ষকতা করার সুযোগ। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বাণিজ্য শিক্ষায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বিবিএ এমবিএ ডিগ্রীধারীদের কদর সবচেয়ে বেশী। মিডিয়াজগতেও পিছিয়ে নেই বিবিএ এমবিএ ডিগ্রীধারীরা। বাংলাদেশের অনেক খ্যাতিমান সংবাদকর্মী, সংবাদ পাঠক বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রী অর্জনের পর এ জগতে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
২। হতে পারেন সফল উদ্যোক্তা
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় বেকার অবস্থায়। কিন্তু বিবিএ বা এমবিএ করার পরে তাদের সাধারণত বেকার থাকতে হয় না। চাকরি না করেও তারা হতে পারে উদ্যোক্তা। সামর্থ্য অনুযায়ী তারা হতে পারে ক্ষুদ্র, বা মাঝারী উদ্যোক্তা। একদিন তাদের মধ্য থেকেই কেউ কেউ হয়ে যায় বড় মাপের উদ্যোক্তা।
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা কৃষি কিংবা অন্যান্য প্রজেক্ট কিভাবে গড়তে হয় তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বিবিএ, এমবিএ প্রোগ্রামের মাধ্যমে। কিভাবে পুঁজি সংগ্রহ করা যায় এবং পুঁজির সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায় তার সহজ সমাধানও থাকে এ প্রোগ্রামে।
ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর চাকরি না করে স্বাধীন ভাবে শেয়ার ব্যবসায়, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন অনেকেই।
বিবিএ এমবিএ গ্র্যাজুয়েটদের এত কদর কেন?
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে বৈচিত্র্যময় কোর্সের সমাহার থাকে। যুগোপযোগী এসব কোর্সের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম সম্পর্কে আগেভাগেই ধারণা পেয়ে থাকেন। শিক্ষাজীবন থেকেই এদের মধ্যে একধরনের পেশাদারিত্বের লক্ষণ দেখা যায়। ফলে চাকরিদাতারা যে ধরনের স্মার্ট ও পটু কর্মী খুঁজেন, তার প্রত্যেকটি বিষয়ই পাওয়া যায় বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্নকারীদের মধ্যে।
কারণ চার বছরের বিবিএ প্রোগ্রামে অসংখ্য অ্যাসাইনমেন্ট, ফিল্ড ওয়ার্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুর, প্রেজেন্টেশন এ অংশ নিতে হয় শিক্ষার্থীদের। শেষ বর্ষে এসে তাদেরকে কোন একটি কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে হাতে কলমে কাজ শিখতে হয়। অর্থাৎ জব মার্কেটে যাওয়ার আগে তাদের একটি মানসম্মত প্রস্তুতি গ্রহণ হয়ে থাকে।
সর্বশেষ বলে রাখা ভালো, ব্যবসায় প্রশাসন একটি গতিশীল সাবজেক্ট। তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিবর্তিত দেশ ও বৈশ্বিক বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে এটিও পরিবর্তনশীলও। ফলে সবসময়ই এর চাহিদা থাকবে আকাশচুম্বী।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (ফাইন্যান্স), ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, বিআইইউ, ঢাকা।
ইমেইলঃ [email protected]
