স্বপ্নবাজ সংগঠক আশরাফুল আলম হান্নান : মানবতার আলোকবর্তিকা
মানবসেবার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আশরাফুল আলম হান্নান ঠিক সেই কাজটিই করে চলেছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। তিনি শুধু একজন সফল সংগঠক নন, বরং একজন মানবিক মানুষ, যিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবায়।
পরিবার থেকে পাওয়া ত্যাগের শিক্ষা, মানবতার পথে যাত্রা
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তার বাবা, শহীদ সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম, নিজের জীবন দিয়ে সেনা অফিসারদের রক্ষা করেছিলেন। তিনি ছিলেন সেই বিরল ব্যক্তি, যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। বাবাকে হারানোর পর মা-কে নিয়েই জীবনসংগ্রামে এগিয়ে যান হান্নান। কিন্তু ২০২০ সালে মাকেও হারান ভারতের চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতালে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে হান্নান সমাজসেবায় আরও নিবেদিত হয়ে পড়েন।
একজন দক্ষ সংগঠক এবং সফল উদ্যোগতা
পেশাগত জীবনে আশরাফুল আলম হান্নান একজন মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস এবং বিজিবি’র ঠিকাদার, জাতীয় দৈনিকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ‘শহীদ সেনা অ্যাসোসিয়েশন’-এর মুখপাত্র ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তবে তার আসল পরিচয়—তিনি একজন সমাজসেবক ও স্বপ্নবাজ সংগঠক।
তার নেতৃত্বে রামগতি বি বি কে পাইলট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রথমবারের মতো পূর্ণমিলনী আয়োজন করে, যা ৮৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম। তার এই নেতৃত্বগুণ প্রমাণ করে, সঠিক পরিকল্পনা ও স্বপ্ন থাকলে কিভাবে মানুষকে একত্রিত করা সম্ভব।
‘স্বপ্ন নিয়ে’—মানবতার জন্য এক নির্ভরযোগ্য সংগঠন
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে আশরাফুল আলম হান্নান প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্বপ্ন নিয়ে’ সংগঠন, যা ঢাকা জেলা থেকে নিবন্ধিত। তার লক্ষ্য ছিল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখান থেকে মানুষ বিনামূল্যে সহায়তা পাবে। এখন এটি হাজারো মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনছে, ভবিষ্যতে তা আরও বিস্তৃত হবে বলে তিনি আশা করেন।
‘স্বপ্ন নিয়ে’-এর ব্যতিক্রমী উদ্যোগসমূহ-
✔ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কৃত্রিম পা সংযোজন—১১৭ জনের সহায়তা
✔ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও শিক্ষাসামগ্রী প্রদান
✔ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপ ও চাকরি সংস্থান—১০০+ শিক্ষার্থী উপকৃত
✔ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
✔ শহীদ মিনার নির্মাণ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা উদ্যোগ
✔ গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ ও প্রবীণদের জন্য ‘নির্ভরতার লাঠি’ প্রকল্প
✔ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বই দান ও ছাতা বিতরণ
✔ রক্তদান কর্মসূচি—নিজেও ২৩ বার রক্তদান করেছেন
✔ ‘স্বাবলম্বী প্রকল্প’—১৩৬ জনকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ প্রদান
✔ বন্যা ও শীতকালীন ত্রাণ বিতরণ
কোভিড-১৯ মহামারিতে অনন্য অবদান
করোনার সময় অসংখ্য মানুষ যখন বিপদে পড়েছিল, তখন ‘স্বপ্ন নিয়ে’ সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে:
✔ ৩,৭০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা (৩ লাখ ১০ হাজার বেলার খাবার)
✔ ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১২০ জন নন-এমপিও শিক্ষকের জন্য এক মাসের খাদ্য সহায়তা
✔ ২১ জন বিধবা নারীর জন্য রমজান মাসের খাবার প্রদান
✔ ২২০ জন চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের জন্য পিপিই বিতরণ
✔ ফ্রি অক্সিজেন সাপোর্ট প্রদান
✔ জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১২টি হ্যান্ডওয়াশ ব্লক স্থাপন ও লিফলেট বিতরণ
অগ্নিদগ্ধ ১১ জনের জন্য মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া
কক্সবাজারে অগ্নিদগ্ধ ১১ জন মানুষ যখন নিরুপায় অবস্থায় ছিলেন, তখন ‘স্বপ্ন নিয়ে’ সংগঠনের নেতৃত্বে তারা পেয়েছেন আশার আলো।
✔ প্রতিদিন ১০-১২ ব্যাগ প্লাজমা ও প্লাটিলেট রক্তদান
✔ ওষুধ ও চিকিৎসা পরীক্ষার ব্যয়ভার বহন
✔ রোগীদের পরিবারের জন্য থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা
✔ সুস্থ হওয়ার পর এম্বুলেন্সে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া
‘স্বপ্ন নিয়ে’ নিবাস—চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের জন্য আশ্রয়
নোয়াখালী ও ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘স্বপ্ন নিয়ে’ নিবাস এমন একটি জায়গা, যেখানে চাকরিপ্রার্থী, চিকিৎসার জন্য আগত রোগী ও ভর্তি পরীক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে থাকতে ও খেতে পারে।
✔ ২০৯৮ জন উপকৃত হয়েছে
✔ ১৫,২৩০ দিন থাকা ও ১২,৩৬০ বেলার খাবার বিতরণ
সত্যিকারের মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত
আশরাফুল আলম হান্নানের স্বপ্ন, আরও বেশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তার উদ্যোগ ও মানবিকতা সমাজের জন্য এক উদাহরণ।

