মানুষের স্বার্থে জঙ্গিবাদ বিলীন হওয়া প্রয়োজন : হাইকোর্ট

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, দেশের মানুষের কল্যাণের স্বার্থে জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গি তৎপরতা চিরতরে দেশ থেকে বিলীন হওয়া প্রয়োজন।
আদালত বলেন, জঙ্গিরা একটি অবাস্তব ও ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে তাদের এ ধরনের মনমানসিকতা সৃষ্টি করেছিল। আবার দেখা যাচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে গিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে ট্রেনিং (প্রশিক্ষণ) নিয়েছে। এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতার আড়ালে যাদের বিচরণ ছিল তাদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাদেরকে তদন্তের আরও গভীরে যাওয়া উচিত ছিল। তদন্ত কর্মকর্তারা মামলার তদন্তে আরও অধিকতর মনোযোগী হতে পারতেন। অবস্থা যা হোক না কেন, আসামিরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সরকারকে দোষারোপ করেছিল। অথচ আসামিরা যাদেরকে ইসলামবিরোধী বা বিদ্বেষী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল তারাই এ দেশে ইসলামকে সুপ্রিতিষ্ঠিত করার জন্য কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছে।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণ দেন। রায়ে বলা হয়, দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামিরা (হুজি জঙ্গি) দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলতে নারাজ। তারা জঙ্গি তৎপরতার মাধ্যমে তাদের নিজস্ব চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে চায়। কিন্তু জঙ্গিদের এ ধরনের চিন্তা দেশের প্রচলিত আইন কখনও সমর্থন করে না। কারণ এরা সকলেই জন্মগতভাবে এই দেশেরই নাগরিক। ষড়যন্ত্র করে শক্তিশালী দুটি বোমা পুতে রাখার মধ্য দিয়ে যে অপরাধ আসামিরা সংঘটিত করেছে তা ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর ও জঘন্য।
আসামিরা দেশের বাইরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ যোগ দিয়েছিল উল্লেখ করে আদালত বলেন, আবার ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে গিয়েও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে বিভিন্ন জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
আদালত বলেন, অবস্থা যাই হোক, আসামিরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে তৎকালীন সরকারকে দোষারোপ করেছিল। অথচ ইসলামের মূল্যবোধ এবং হযরত মুহাম্মদ (স.) আদর্শিক দিকগুলো এ দেশের মুসলিম বাঙালিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য এবং আগত জেনারেশনকে (প্রতিষ্ঠা) এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন ইসলামিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু তাই নয়, তিনি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিষয়েও সজাগ ছিলেন। সে অগ্রযাত্রা পরবর্তীকালে আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। আসামিরা যাদেরকে ইসলামবিরোধী বা বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল তারা ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠার কাজে লিপ্ত। ইসলামের মূল্যবোধ সম্পর্কে আসামিদের ভ্রান্ত ধারণা ও তাদের এহেন কর্মে পুরো দেশ ও সমাজ অশান্তিতে বিরাজমান ছিল। ইসলাম ভালো কাজের প্রশংসা করার জন্য বার বার তাগিদ দিয়েছে। আসামিদের এ ধরনের ধ্যান-ধারণা এবং শক্তি প্রদর্শন ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম।
আসামিদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আদালত বলেন, ষড়যন্ত্রকারী আসামিরা মূলত তাকে (শেখ হাসিনা) হত্যা করার জন্য এ ঘটনার অবতারণা করেছিল। তিনি তখন বৈধ সরকারপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন। একটি বৈধ সরকারপ্রধান এবং তার সহযোগীদেরকেসহ হত্যার প্রচেষ্টা ও তা বাস্তবায়ন করা কতখানি দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর তা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পরবর্তী সময়ে এ দেশের নিরীহ স্বাধীনতাকামী জনগণ উপলব্ধি করেছে। আসামিদের এ ধরনের ভ্রান্ত চিন্তা এবং ধারণা এ জাতির জন্য একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। দেশের মানুষের কল্যাণের স্বার্থে জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গি তৎপরতা চিরতরে এ দেশ থেকে বিলীন হওয়া প্রয়োজন বলে আদালত মন্তব্য করেন।
পরে হাইকোর্ট এই মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জঙ্গি ফাঁসির রায় বহাল রাখেন।
এমএইচডি/এফআর