উচ্চ আদালতে জামিন পেতে ‘আলোচিত’ আসামিদের তোড়জোড়

দেশজুড়ে আলোচিত বিভিন্ন মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। তারা একের পর এক জামিন আবেদন করে যাচ্ছেন। হাইকোর্টের এক বেঞ্চ থেকে জামিন পেতে ব্যর্থ হলে ছুটছেন অন্য বেঞ্চে।
আলোচিত এসব আসামির মধ্যে রয়েছেন- রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ভবন মালিক সোহেল রানা, সোনা চোরাকারবারে অভিযুক্ত আবু আহাম্মদ, বরখাস্ত ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশিদ, মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। এছাড়া রাজধানীর শাহজাহানপুরের আলোচিত টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার একাধিক আসামি, রিজেন্ট গ্রুপের মোহাম্মদ সাহেদ, দুদকের বরখাস্ত কর্মকর্তা এনামুল বাছির,বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান,হেফাজতের নেতা মামুনুল হকসহ বিভিন্ন আলোচিত আসামিরা হাইকোর্টে একের পর এক জামিন আবেদন করে যাচ্ছেন।
আলোচিত এসব আসামির মধ্যে রয়েছেন- রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ভবন মালিক সোহেল রানা, সোনা চোরাকারবারে অভিযুক্ত আবু আহাম্মদ, বরখাস্ত ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশিদ, মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। এছাড়া রাজধানীর শাহজাহানপুরের আলোচিত টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার একাধিক আসামি, রিজেন্ট গ্রুপের মোহাম্মদ সাহেদ, দুদকের বরখাস্ত কর্মকর্তা এনামুল বাছির,বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান,হেফাজতের নেতা মামুনুল হকসহ বিভিন্ন আলোচিত আসামিরা হাইকোর্টে একের পর এক জামিন আবেদন করে যাচ্ছেন
অবাক হওয়ার মতো তথ্য হচ্ছে, দেশের নামকরা আইনজীবীরা এসব আসামির পক্ষে শুনানি করছেন। অনেকে জামিনও পাচ্ছেন। অতঃপর তাদের জামিন চেম্বার আদালতে স্থগিত করিয়ে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা। তারা বলছেন, এ বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি আছে। আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিরা যেন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে যেতে না পারেন সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর তা স্থগিতে আমরা আপিল বিভাগে আবেদন করছি।
আরও পড়ুন >> শিগগিরই মুক্ত হচ্ছেন হারুন ইজাহার-রফিকুল-মামুনুল
আলোচিত মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা-
রানা প্লাজার সোহেল রানা
রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানার জামিনের বিষয়ে আগামীকাল ৮ মে আপিল বিভাগে শুনানি হবে। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম তার পক্ষে শুনানি করবেন।
অবাক হওয়ার মতো তথ্য হচ্ছে, দেশের নামকরা আইনজীবীরা এসব আসামির পক্ষে শুনানি করছেন। অনেকে জামিনও পাচ্ছেন। অতঃপর তাদের জামিন চেম্বার আদালতে স্থগিত করিয়ে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা
গত ৯ এপ্রিল হত্যা মামলায় সোহেল রানাকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত। সোহেল রানার জামিন স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী এ আদেশ দেন।
আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ সাইফুল আলম।
আরও পড়ুন >> হাইকোর্ট থেকে একের পর এক জামিন পাচ্ছেন জঙ্গিরা!
গত ৬ এপ্রিল রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। তার জামিন সংক্রান্ত রুলের যথাযথ শুনানি শেষে বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর আগে হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চে জামিন আবেদন করে ব্যর্থ হন রানা।
গত বছরের ১ মার্চ রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় সোহেল রানাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
সোনা চোরাকারবারি আবু আহাম্মদ
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ২০৪ কোটি টাকা পাচারের মামলায় সোনা চোরাকারবারি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা আবু আহাম্মদকে জামিন না দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। তিন মাসের ব্যবধানে আবারও হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তিনি।
ওই জামিন আবেদনের শুনানি শেষে গত ৬ এপ্রিল আবু আহাম্মদকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেন। পরে তার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আরও পড়ুন >> তারেকের এপিএসের পক্ষে শুনানি : অ্যাডভোকেট কামরুল যা বললেন
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১১ এপ্রিল আবু আহাম্মদের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ওই দিন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে তার জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ২০৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে আবু আহাম্মদ হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। ৬ ডিসেম্বর আবু আহাম্মদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
২০২০ সালের ১৮ মার্চ কোতোয়ালি থানায় মামলা করে সিআইডি। মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) হতে প্রাপ্ত ব্যাংক হিসাববিবরণী, কাগজপত্র পর্যালোচনা, লেনদেনের ধরন ও আসামির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে আসামিরা একে অপরের সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১২ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা ও হুন্ডির মাধ্যমে ২০৪ কোটি টাকার পাচারের অর্থ দিয়ে গাড়ি, বাড়ি, মার্কেটসহ বিভিন্ন সম্পত্তি অর্জন করেছেন।
বরখাস্ত ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশিদ
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত কারা-অধিদপ্তরের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশীদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ২৯ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। ২৯ মে আপিল বিভাগে তার জামিন বিষয়ে শুনানি হবে।
গত ৬ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। গত ৫ এপ্রিল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বজলুর রশীদকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন >> আন্তর্জাতিক আদালতে কাজ করা বাংলাদেশি নারী ব্যারিস্টার
গত বছরের ৩ নভেম্বর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে বজলুর রশীদের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। ২ নভেম্বর বজলুর রশীদ আপিল করেন। একই সঙ্গে জামিনেরও আবেদন করেন তিনি।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর জ্ঞাত আয়ের বাইরে তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কারা-কর্তৃপক্ষ থেকে বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বজলুর রশিদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া তাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির
অর্থপাচার মামলায় মো. মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে শুনানি আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। তার পক্ষে শুনানি করবেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
গত ২৬ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। মনিরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
গত ৫ এপ্রিল অর্থপাচার মামলায় মনিরকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে ওই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০২০ সালের ১১ মে সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম মনিরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে বাড্ডা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মনিরের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও বোনকেও আসামি করা হয়। এরপর একই বছরের ২১ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় হাইকোর্টে আবারও জামিন আবেদন করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।
এর আগে ১০ জানুয়ারি এ মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।
মামলা থেকে জানা যায়, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১৪ সালে শাহবাগ থানায় মামলা হয় আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শাহবাগ থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আলোচিত এসব মামলার পাশাপাশি রাজধানীর শাহজাহানপুরের আলোচিত টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার একাধিক আসামি, রিজেন্ট গ্রুপের মোহাম্মদ সাহেদ, দুদকের বরখাস্ত কর্মকর্তা এনামুল বাছির, বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান, হেফাজতের নেতা মামুনুল হকসহ বিভিন্ন আলোচিত আসামিরা হাইকোর্টে একের পর এক জামিন আবেদন করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার প্রতিটি আসামির জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আইনি যুক্তি তুলে ধরে জামিনের বিরোধিতা করেন। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপরও যদি হাইকোর্ট থেকে আলোচিত মামলার মূল আসামিরা জামিন পান তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হচ্ছে।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। হাইকোর্ট যখন জামিন দেন, দেখেশুনে, আইন বিশ্লেষণ করে এবং উভয়পক্ষের যুক্তি শুনে জামিন দেন। তবে, দুর্নীতি ও অর্থপাচার মামলার চিহ্নিত আসামিরা যেন জামিন না পান, সে বিষয়ে আমরা সক্রিয় আছি। হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করছি।
এমএইচডি/এমএআর
