মা হওয়ার পর প্রতিটি মুহূর্ত এনজয় করি

মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। পিয়া জান্নাতুল নামেই বেশি পরিচিত। এখন তার বড় পরিচয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। উচ্চ আদালতে আইন পেশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এ আইনজীবী-অভিনেত্রী ২০১৪ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ফারুক হাসান সামীরকে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছেলে সন্তানের মা হন পিয়া জান্নাতুল। এখন তার জীবনের বড় অংশই জুড়ে রয়েছে আদরের সন্তান।
মা দিবস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেন এ আইনজীবী মা। তার ভাষায়, ‘মা হওয়ার পর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। সন্তানকে নিয়ে এখন প্রতিটি মুহূর্ত এনজয় করি। আর ভাবি আমি কত ভাগ্যবান।’
পিয়া জান্নাতুল বলেন, বছরের একটি দিন মায়ের জন্য পালন করা হয়। মা নয় মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন। নয় মাস পর যখন সন্তানের জন্ম হয় তখন থেকে মা যত দিন বেঁচে থাকেন তত দিন সন্তানের জন্য দায়িত্ব পালন করে যান। আমার মাও এরকম করেছেন। এই তো কয়েক দিন আগে আমার মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আচ্ছা আমি কি ভালো মা? এই প্রশ্ন শুনে প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। তাকে বললাম, তুমি চমৎকার এবং সবচেয়ে ভালো মা। প্রত্যেক মা সেরা মা। কারণ, প্রত্যেক মা তার সর্বোচ্চ দিয়ে সন্তানের জন্য করে থাকেন। এখন আমার একটা সন্তান আছে। এখন আমি অনুভব করি, আমার কাছে পৃথিবীর সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমার সন্তান। জগতের সবকিছুর চেয়ে আমি আমার সন্তানের ভালো চাই।
মা হওয়ার আগের জীবন ও বর্তমান জীবনের মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইলে এ আইনজীবী মা বলেন, ‘পার্থক্য একটাই বলব, এখন দায়িত্বের মানুষ হয়ে গেছি। আমার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তবে, ব্যস্ত আমি আগেও ছিলাম, এখনও আছি। সন্তানের জন্য ঘুমাতে পারি না, কাজ করতে পারি না– এটা আমি বলব না। সন্তান হওয়ার পর আমি প্রতিটি মুহূর্ত এনজয় করি। আমার ছেলে যখন ঘুমায় মাঝে মাঝে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকি। ভাবি আমি কত ভাগ্যবান। তবে, মা হওয়ার পর জীবনে পরিবর্তন খুব একটা আসেনি। আগে যে রকম কাজ করতাম, এখনও সেভাবে কাজ করি। এখন আমি আমার ছেলেকে অনেক বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি এখন আরেকজন মানুষকে মানুষ করার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয়, এটা সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।’
কর্মজীবী মায়েদের নিয়ে আইনজীবী পিয়া বলেন, ‘কর্মজীবী মা যারা আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমি জানি তাদের জন্য এটা কঠিন সময়। যাদের ছোট সন্তান আছে সেই ছোট/বাচ্চা সন্তানকে রেখে কাজে যেতে হয়। বাচ্চার যদি সর্দি-কাশি থাকে তারপরও কাজে যেতে হয়। এ সময়গুলো একজন মায়ের জন্য খুবই কষ্টের। কিন্তু আমি বলব, আপনার সন্তান যখন বড় হবে তখন গর্ব করে বলতে পারবে যে আমার মা একজন ল-ইয়ার, একজন ব্যাংকার বা বিজনেস ওমেন বা কর্মজীবী নারী। তার থেকে বড় কথা, আপনি যখন আপনার কঠোর পরিশ্রমের টাকা দিয়ে বাচ্চার জন্য কিছু কিনতে পারবেন, সেটার যে তৃপ্তি, বাচ্চার মুখের যে হাসি, আপনি ভাষায় বর্ণনা করতে পারবেন না।’
পৃথিবীর সব মায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘একটা কথাই বলতে চাই, উই আর ওয়ান্ডার ওমেন। বিকজ, আমরা জানি যে একজন বাচ্চা যখন জন্ম দিতে হয় নিজের জীবনের ঝুঁকি থাকে, তারপরও আমরা মা হই। মা হতে ভালোবাসি, বাচ্চাদেরও সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। আবারও বলব, উই আর ওয়ান্ডার ওমেন।
মা দিবস পালনের যথার্থতা নিয়ে পিয়া জান্নাতুল বলেন, ‘দেখুন মা দিবসে তো আর ছুটি থাকছে না। তবে, আমরা আলাদা করে মনে করিয়ে দেই যে আজ কিন্তু মা দিবস। এই যে আমরা মায়ের নামে দুটো ভালো কথা আলাদা করে বললাম, আমিও আমার মাকে ভালোবাসি, হয়তো কখনও এভাবে বলা হয় না। এ দিবসকে কেন্দ্র করে যে আলাদাভাবে বলব, শুনে আমার মা খুব খুশি হবেন। আমার ছেলেও যখন বড় হয়ে বলবে, আমিও খুশি হব। মা দিবসে সন্তানকে বেশি সময় দেব।’
একনজরে জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া
২০১২ সালে পরিচালক রেদোয়ান রনির ‘চোরাবালি’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় পিয়ার। এরপর তাকে বেশ কিছু সিনেমা, নাটক ও সংগীতচিত্রে দেখা যায়। তবে, আপাতত আর সিনেমায় কাজ করছেন না। ২০১৩ সালে ইন্ডানিয়ানা প্রিন্সেস মুম্বাইতে সেরা সুন্দরীর মুকুট ওঠে তার মাথায়। বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ সাময়িকীর (ভারত সংস্করণ) প্রচ্ছদ মডেলদের সঙ্গেও জায়গা করে নেন তিনি। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) উপস্থাপনা করেন পিয়া। এছাড়া আইসিসি- ২০১৯ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপেও উপস্থাপনা করতে দেখা গেছে লন্ডনের মাঠে।
২০১৭ সালে ‘মিস বাংলাদেশ’ শিরোপা জয়ী পিয়া আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ‘লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ’ থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এখন তিনি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করছেন। আইন পেশার ব্যস্ততার কারণে অভিনয়কে এখন বাদ রেখে কেবল মডেলিং ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন তিনি।
এমএইচডি/এসএসএইচ/ওএফ
