চাকরিতে কোটার সুবিধা নিতে তৈরি হয়েছিল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা

সরকারি চাকরিতে কোটার সুবিধা নেওয়ার জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হয়েছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দেওয়া সাক্ষ্যে এ কথা জানান তিনি। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে তার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় জুনায়েদের জবানবন্দি শুরু হয়। প্রথমেই সাক্ষীর ডায়াসে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দেন। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন বলেও জানান তিনি। জুনায়েদ বলেন, ২০১৩ সালে কোটা আন্দোলনের সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলাম। আন্দোলনের একপর্যায়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলাম। ওইসময় আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ছাত্রলীগও আমাদের মিছিলের ওপর হামলা চালায়। এরপর আমাদের আন্দোলন আর অগ্রসর হয়নি।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কোটা সংস্কারের আন্দোলন পুনরায় শুরু হয়। এ আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আন্দোলন দমনের জন্য ব্যাপক আক্রমণ চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন হাসান আল মামুন, নুরুল হক নুর, রাশেদ খান প্রমুখ। কিন্তু আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে রাগের বশবর্তী হয়ে সরকারি চাকরির নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেডে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ২০১৩ সালে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করেন তিনি। ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করলে দেখা যায় যে, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পাস নম্বর বা কাট মার্ক ৭২। অন্যদিকে কোটাধারীদের জন্য তা হয় ৪২। ফলে মেধাবীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। আর এ সুবিধা নেওয়ার জন্য অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হয়। ফলে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা।
এই সাক্ষী আরও বলেন, গোপালগঞ্জের লোকেরাই কোটার সুযোগ সবচেয়ে বেশি পেতে থাকেন। কোটাপ্রথা বাতিল করে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ জানালে ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদের পক্ষ থেকে ওহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে একটি রিট করেন। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করেন হাইকোর্ট। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা, যা সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে জুনায়েদকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে, আজ সকালেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। তার উপস্থিতিতেই জবানবন্দি দিচ্ছেন সাক্ষীরা।
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহসহ অন্যরা।
এমআরআর/এসএসএইচ