রিমান্ডের আদেশ শুনে কাঠগড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়লেন সেই এনায়েত করিম

১১ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডের আদেশের পর কাঠগড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজ রিমান্ডের আদেশ দেন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করে রমনা মডেল থানা পুলিশ। বিকেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন রমনা মডেল থানার এসআই আজিজুল হাকিম।
তবে ওইদিন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধ আইনে রমনা মডেল থানায় মামলা করে পুলিশ। তাকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। দুই দফায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে ২২ সেপ্টেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরই মধ্যে এনায়েত করিম চৌধুরীকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এরপর আজ তার পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম। রিমান্ড শুনানিতে সকালে এনায়েত করিমকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ১১টা ২০ মিনিটের এনায়েত করিমকে এজলাসে তোলা হয়। এসময় তার মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হাতে হাতকড়া ছিল। আসামির কাঠগড়ায় একটি বেঞ্চে বসে ছিলেন তিনি। প্রায় ৫০ মিনিট পর রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তবে আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। পরে আদালত দার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয় বলে জানান দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম।
এরপর বেঞ্চে বসা এনায়েত করিম হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে বেঞ্চে হেলে পড়েন। এ অবস্থা দেখে কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে গিয়ে ধরে ফেলেন। পানি চাওয়ায় তা সরবরাহ করেন। দেওয়া হয় মিষ্টি চকলেটও। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন মোল্লা। তবে এনায়েত করিম জানান, তিনি ঠিক আছেন। এজন্য তাকে আর হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে রিপন মোল্লা বলেন, আমরা এনায়েত করিমকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে আসামি জানিয়েছেন, তিনি ঠিক আছেন। এজন্য তাকে আর হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। তবে তাকে স্যালাইন, হালকা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এখন তিনি আগের চেয়ে সুস্থ আছেন।
এনায়েত করিমের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, বেনজীর আহমেদদের বিদেশে পাচার করা অর্থের সঙ্গে এনায়েত করিম চৌধুরীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বেনজীর আহমেদ কর্তৃক অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা অর্থের অবস্থান, বিনিয়োগের তথ্য, মালিকানা এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। এতে বেনজির, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদ তার অপরাধলব্ধ ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদে উত্তোলনের পর কোথাও বিনিয়োগ করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অর্থ উত্তোলনের পরই বিদেশে চলে যান। ফলে, নগদে উত্তোলিত অপরাধ লব্ধ আয়ের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করার লক্ষ্যে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বেনজীর আহমেদ। বেনজির ও তার স্ত্রী-কন্যারা ২০২৪ সালে বিভিন্ন সময় তাদের নামে দীর্ঘদিনের এফডিআর হিসাব মেয়াদোত্তীর্ণের আগেই একযোগে উত্তোলন করেছেন। এ এফডিআরের অর্থের গ্রহণযোগ্য কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। যা বেনজীর আহমেদ র্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের আইজিপিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এ অর্থ উত্তোলনের পর কোথাও বিনিয়োগ করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ডিসেম্বরে ৭৪ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা করে দুদক।
এনআর/এসএম