ট্রাইব্যুনালের উষ্মা : ‘কয় মিনিটের জন্য আমাদের বসিয়েছেন’

প্রথমে ছয় তরুণকে হত্যা। এরপর পুড়িয়ে দেওয়া হয় আগুনে। আশুলিয়া থানার সামনেই চব্বিশের ৫ আগস্ট এমন নৃশংসতা চালায় পুলিশ। জুলাই-আগস্ট ঘিরে মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ। তবে পরপর দুদিন প্রসিকিউশনের প্রতি কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এই ট্রাইব্যুনাল।
আশুলিয়ায় মামলায় ১২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল আজ (বৃহস্পতিবার)। এদিন বেলা ১১টা ৬ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে আসেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। ঠিক তখনই সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়ার অনুমতি চান প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। আর সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন এসআই ওমর ফারুক খান।
শুরুতেই নিজের পরিচয় তুলে ধরেন সাক্ষী। তিনি সিআইডির ফরেনসিক শাখার আলোকচিত্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাক্ষ্য দিতে আসেন এ মামলায়। এর মধ্যেই তাকে থামিয়ে প্রসিকিউটরের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আজ আপনাদের সাক্ষী কতজন। উত্তরে প্রসিকিউশনের পক্ষে ফারুক আহাম্মদ বলেন, একজন দেবেন মাই লর্ড। তিনি এ মামলার জব্দতালিকার সাক্ষী।
কতক্ষণ লাগতে পারে বলে জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। জবাবে ২০ মিনিটের কথা জানান প্রসিকিউটর। একইসঙ্গে স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরায় কিছু সময় লাগতে পারে।
এ সময় উষ্মা প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, কয় মিনিটের জন্য আমাদের বসিয়েছেন। না উঠলেও চলে। তখন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ বলেন, মাই লর্ড, আমাদের অন্য মামলা ট্রাইব্যুনাল-১ এ দেখতে হয়। এ সপ্তাহে সব ঠিক হয়ে যাবে। আশা করি আগামী সপ্তাহে আমরা কন্টিনিউ করতে পারবো। এরপর জবানবন্দি শুরু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আসামিপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, তালিকা অনুযায়ী আজ দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়ার কথা ছিল। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। কিন্তু সাক্ষী হিসেবে একজনকে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। এতে ট্রাইব্যুনালের কালক্ষেপণ হচ্ছে।
এর আগে, ১৩ অক্টোবর আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি প্রসিকিউশন। এজন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম। তিনি বলেছিলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমাদের সাক্ষী আসতে পারেননি। বাকি প্রসিকিউটররা ট্রাইব্যুনাল-১ এ অন্য মামলা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই এ মামলায় ২০ অক্টোবরের পর সাক্ষী উপস্থাপন করতে চাই।’
ওই সময় প্রসিকিউশনের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘সাক্ষী ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে হাজির হতে পারেনি, এটা কি লেখা যায়? আপনারা যা বলছেন, এটা কি বলতে পারেন? এটা যে আদালত অবমাননা তা কি জানেন? যদি কাজই করতে না পারেন, ব্যস্তই থাকেন, তাহলে দুটি ট্রাইব্যুনাল কেন করা হলো? আপনাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
এদিকে, আজ সকালে আশুলিয়ার মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন— ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
আরও পড়ুন
জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।
এমআরআর/এনএফ