আওয়ামী লীগের আমলে কোনো দুঃশাসন ছিল না : শেখ হাসিনার আইনজীবী

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের আমলে কোনো দুঃশাসন ছিল না বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
সোমবার (২০ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় তিনি এ কথা বলেন।
এদিন দুপুর ১২টা থেকে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
আরও পড়ুন
যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে আমির হোসেন বলেন, আওয়ামী দুঃশাসন ও ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরের বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেছেন প্রসিকিউশন। কিন্তু কোনো সুশাসনের কথা বলা হয়নি। যদি বলতেন তালে আমি এক বাক্যে এসব মেনে নিতাম। তাই তাদের এই বক্তব্যটা মানতে পারছি না। কারণ আওয়ামী লীগের সময় কোনো দুঃশাসন ছিল না। তবে একটি পরিবারের কর্তা হিসেবে যেমন কিছু ভুলত্রুটি থাকে, তেমনি রাষ্ট্রের যিনি প্রধান থাকেন তিনিও ভুলে ঊর্ধ্বে নন। কারণ রাষ্ট্রের প্রধানের অনেক দায়িত্ব থাকে। তার একটা চেষ্টা থাকে রাষ্ট্রকে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য। সেই চেষ্টায় হয়তো কিছু ভুল ত্রুটি হতেও পারে বা হয়েও যায়। ভালো উদ্যোগও অনেক সময় খারাপে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, আমি মনে করি উন্নয়নের মহাসোপানে যাওয়া সময় ছিল এই আওয়ামী লীগের ১৫ বছর। কেননা এ সরকার এসে মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ দেশের প্রায় জায়গায় অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে। এছাড়া একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে এই রাষ্ট্রকে উন্নীত করার যে প্রচেষ্টা, তা বাস্তবায়নে অনেকটা সফল হয়েছেন শেখ হাসিনা। এসব সফল যদি দুঃশাসন বলা হয়, তাহলে সুশাসন কাকে বলে আমি জানি না। ফ্যাসিবাদ শব্দটি মূলত একটি বয়ান। এসব বলে বলে একটি সরকারকে যে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছেন, এটাই একটি পরিকল্পিত বয়ানের অংশ।
এ সময় আমির হোসেনের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন-গুম, বেআইনি আটক, মিথ্যা মামলা, অপহরণ এই কাজগুলো কী?
জবাবে এই আইনজীবী বলেন, এসব আমি অস্বীকার করি। এগুলো প্রসিকিউশন বলেছে। তাদের সঙ্গে আমি একমত নই। সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। এসব কিছুই করেননি। রাষ্ট্র চালাতে গেলে প্রয়োজনে অনেক কঠোর হতে হয়। সেই কঠোরতার ক্ষেত্রে কিছু ভুলত্রুটি হয়। এসব মেনে নিয়েই একটি রাষ্ট্র। আদি থেকেই এটা হয়ে আসছে। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
আমির হোসেন বলেন, একটি দেশ পরিচালনা বা শাসন ব্যবস্থা চালাতে গেলে সবই যে সঠিক হবে তা নাও হইতে পারে। শুধু বেঠিকটাকেই প্রাধান্য দেবো, সঠিকটাকে দেবো না; আদালতের কাছে বিচারটা এজন্যই। তারাই ঠিক করবে কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক বা কতটুক ভুল, কতটুক শুদ্ধ হয়েছে। সেই বিচারটা আপনারা করবেন। কিন্তু প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে যেভাবে ঢালাওভাবে আনা হয়েছে এসব তাদের একেবারেই ব্যক্তিগত বয়ান। শেখ হাসিনার সরকারকে দীর্ঘদিনের শাসন থেকে অপসারণ করতে তাদের একটি ডিজাইনেরই অংশ।
প্রথম দিনের মতো আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে আজ। পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।
এমআরআর/এমএসএ