জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলি, উঠে এলো রোমহর্ষক বর্ণনা

নিজ দোকানে কাজ করছিলেন মো. ইয়াকুব। কিন্তু বাইরে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে চলে যান বাসায়। আর তখনই তার চোখের সামনে ঘটে যায় এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। পুলিশের ছোড়া গুলি মাথায় লাগে প্রতিবেশী ছয় বছরের মুসার মাথায়। একই বুলেট গিয়ে বিঁধে শিশুটির দাদির পেটে। পঞ্চাশোর্ধ এই নারীর রক্তে মুহূর্তেই ভেসে যায় সাততলা ভবনের দোতলার সিঁড়ি।
চব্বিশের জুলাই অভুত্থানে রামপুরার সেই রোমহর্ষক বর্ণনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেছেন ইয়াকুব নিজেই।
সোমবার (৩ নভেম্বর) তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বেঞ্চ।
অন্য সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন ২৭ বছরের এই যুবক।
ইয়াকুব বলেন, রামপুরার বনশ্রী এলাকায় ‘নুসরাত হেয়ার স্টাইল’ নামে আমার একটি সেলুন রয়েছে। একই ভবনের সাততলায় আমার বাসা। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় এক শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে আমি দোকানে ছিলাম। তবে বাইরে ঝামেলা দেখতে পেয়ে বাসার নিচতলার পার্কিংয়ে চলে আসি। তখন আমাদের ভবনের ছয়তলার বাসিন্দা মুসা ও তার বাবা-দাদিকে নিচে দেখি। আমরা সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাইরে গোলাগুলি হচ্ছিল। আমাদের ভবনটি রামপুরা থানার ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত। এর মধ্যেই থানার দিক থেকে পুলিশের ছোড়া একটি গুলি মুসার মাথায় লাগে। তাৎক্ষণিক ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেন মুসার বাবা। তবে মুসার মাথা ভেদ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দাদির পেটে গিয়ে লাগে একই গুলি।
তিনি বলেন, গুলি লাগার পর সিঁড়ির ওপরের দিকে উঠতে গিয়ে পড়ে যান মুসার দাদি। রক্তে পুরো সিঁড়ি ভিজে যায়। আমরা তাকে ধরাধরি করে রিকশায় তুলে হাসপাতাল নিয়ে যাই। একই দিন সন্ধ্যা ৬-৭টার দিকে আমাকে ফোন করে নিজের মায়ের অবস্থা জানতে চান মুসার বাবা। তাকে ঘটনাটি খুলে বলি। এ নিয়ে মুসার দাদার সঙ্গেও আমার কথা হয়। পরদিন সকালে মুসার দাদি মারা গেছেন বলে জানতে পারি।
সেদিনের গোলাগুলি প্রসঙ্গে এই সাক্ষী বলেন, ওই দিন থানা থেকে ছোড়া অসংখ্য গুলি এসে আমার দোকানের শাটারে ও ভবনের দেয়ালে লাগে। এখনও গুলির দাগ রয়েছে। এছাড়া একই দিন মসজিদের সামনে পুলিশের গুলিতে আমাদের এলাকার শুকুর আলীর মেয়ের জামাই নাদিম মারা যান।
ইয়াকুবের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে জেরা করেন গ্রেপ্তার এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান। তবে কারও নাম না বলায় জেরা করেননি পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। অন্য আসামিরা হলেন- খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। তবে তারা পলাতক রয়েছেন। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যরা।
এমআরআর/এমএসএ