পরিবেশ খাতে আইনের শাসন-ন্যায় বিচার নিশ্চিতে বিচারকদের কর্মশালা

বিভিন্ন জেলার বিচারক ও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ-সংক্রান্ত মামলা, বিচার এবং আইনের শাসন’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালা আয়োজন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় টিআইবির ধানমণ্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিবসহ মোট ২৫ জন বিচারক ও কর্মকর্তা অংশ নেন।
জলবায়ু সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তি, পরিবেশ-সংক্রান্ত মামলার বিচার, আন্তর্জাতিক ও সাংবিধানিক আইন বিষয়ে বিচারকদের কার্যকর জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিই এ প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য।
উদ্বোধনী বক্তব্যে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,“জাতীয় গবেষণা এবং ইউনেপ–এর আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী পরিবেশ আইনের প্রয়োগে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে এমন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও উত্তম চর্চা অনুসরণ করে পরিবেশ আদালতের বিচারকদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, টিআইবি ভবিষ্যতেও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী এই ধরনের সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।
উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য রাখেন টিআইবির উপদেষ্টা–নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। সঞ্চালনা করেন আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
প্রশিক্ষণের বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করেন– অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককুয়েরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ও পরিবেশ আইনের অধ্যাপক ড. শওকত আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইকরামুল হক।
তারা আইনের শাসন, সুশাসন, আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরোধ, দক্ষিণ এশিয়ার অভিজ্ঞতা, এবং বাংলাদেশের আইনি কাঠামোতে পরিবেশ–বিচারিক প্রতিকার বিষয়ক নানা দিক আলোচনা করেন। দলগত অনুশীলনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা জলবায়ু অভিযোজন, পুনর্বাসন ও ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
উপস্থিত বিচারক ও কর্মকর্তারা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতি, শিল্প–বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তারা জানান, আইন প্রয়োগের দুর্বলতা, প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা এবং নিয়মতান্ত্রিক সীমাবদ্ধতা কার্যকর পরিবেশ সুরক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপরও জোর দেন অংশগ্রহণকারীরা।
তারা আরও বলেন, নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি, শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আইন প্রয়োগ, বন উজাড় রোধে স্থানীয় সম্প্রদায়কে সম্পৃক্তকরণ, নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে জলবায়ু অভিযোজন–পুনর্বাসন কার্যক্রম জরুরি।
প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারী বিচারক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে সনদ তুলে দেওয়া হয়।
আরএম/বিআরইউ