নির্দোষ দাবি করে ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার চাইলেন তিন সেনা কর্মকর্তা

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার বা জেআইসি সেলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন গ্রেপ্তার তিন সেনা কর্মকর্তা। ন্যায়বিচারও চেয়েছেন তারা।
আজ (বৃহস্পতিবার) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ প্রার্থনা করেন এই তিন আসামি। প্যানেলের অন্য সদস্যরা বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিন এ মামলায় আনা পাঁচটি অভিযোগ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের প্রথম সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ। অভিযোগ পড়া শেষে আসামির কাঠগড়ায় থাকা তিন সেনা কর্মকর্তাকে নিজেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বুঝেছেন কিনা জানতে চান। যদিও চার্জ গঠনের পুরো আদেশটি বাংলায় পড়ার জন্য আবেদন করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। তিনি গ্রেপ্তার তিন সেনা কর্মকর্তার হয়ে আইনি লড়াই করছেন। তবে আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আসামিরা (আপনার ক্লায়েন্ট) লিটারেল পারসন বলে মন্তব্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
একপর্যায়ে কাঠগড়ায় থাকা ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী দাঁড়িয়ে যান।
একে একে যার যার অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারক। তাদের অভিযোগ প্রায় একই। তাদের দায়িত্বপালনকালে জেআইসি সেলে গুম ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী, মাইকেল চাকমা। কিন্তু ভুক্তভোগীদের ছেড়ে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেননি এই তিন সেনা কর্মকর্তা।
প্রথমে অভিযোগের বিষয়ে সরওয়ারকে জিজ্ঞেস করা হয় বুঝেছেন কিনা। জবাবে হ্যাঁ সম্বোধন করে তিনি বলেন, মহামান্য আদালত, আমি নির্দোষ। সুবিধার প্রার্থনা করছি। তখন বিচারপতি শফিউল বলেন, ইনশা আল্লাহ, ন্যায়বিচারই হবে।
মাহবুবুর রহমানও নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। তানভির মাজহার বলেন, আমি নির্দোষ মহামান্য আদালত। আমিও ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি।
পরে চার্জ গঠনের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে একটি আবেদন করবেন বলে জানান এই তিন আসামির আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। এ সময় এর বিরোধিতা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আগে অভিযোগ গঠনের আদেশ পাস ও তারিখ নির্ধারণ হবে। এরপর তারা (ডিফেন্স) আসবেন। অথচ এর আগেই ভবিষ্যতের আবেদন করা নিয়ে আইন পড়ছেন।
একপর্যায়ে পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রমের জন্য দুই মাস সময় চান দুলুসহ অন্যান্য আইনজীবী। তখন সম্পর্কিত আইন পড়ে শোনানো হয়।
এ সময় ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আইনে চার্জ গঠনের ন্যূনতম ২১ দিনের মধ্যে পরবর্তী কার্যক্রমের কথা বলা আছে। কিন্তু তারা (ডিফেন্স) বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। যেন কোনো ট্রায়াল না হয়। এজন্যই এত সময় চাইছেন। আগামী দুই বছর পেলেও তাদের কাজ হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠনের পাশাপাশি প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই গুমের এ মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, শাইখ মাহদীসহ অন্যরা। গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে আজিজুর রহমান দুলু ছাড়াও ব্যারিস্টার মাহিন রহমান ও মাসুদ সালাহউদ্দিন এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীরা ছিলেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় পলাতক ১০ আসামির পাঁচজনই ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিভিন্ন মেয়াদে। এর মধ্যে রয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
বাকিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক।
এমআরআর/এমএসএ