কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ : তিন নারীসহ ৬ জন রিমান্ডে

ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলায় তিন নারীসহ ৬ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান এ আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন— মাদ্রাসার পরিচালক আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮), তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার (৩০), আসমানী খাতুন (৩৪), শাহীন ওরফে আবু বকর (৩২), আমিনুর ওরফে দর্জি আমিন (৫০) এবং শাফিয়ার রহমান ফকির (৩৬)। এদের মধ্যে নারীদের তিন দিন করে এবং বাকিদের সাত দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ দেবনাথ রিমান্ডের তথ্য নিশ্চিত করেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম আসামি শাহিন, আমিনুর ও শাফিয়ারের ১০ দিন এবং আছিয়া বেগম, ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানী খাতুনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ দেবনাথ আসামিদের রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
এ সময় আদালত তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আসামিদের কার সঙ্গে কী সম্পর্ক, জানতে চান। তদন্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি আল আমিন ঘটনার আগের দিন সারারাত বোমা তৈরি করে। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমায়। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বিল্ডিংটা তছনছ হয়ে যায়। আছিয়া আল-আমিনের স্ত্রী। আর আছিয়ার ভাবী ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, অপর আসামি আসমানী এক সময় জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। সাত মাস আগে জঙ্গি মামলায় জামিন পান। শাহিনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে। অপর আসামিরা তাদের সহযোগী।
আসামি আসমানীর পক্ষে তার আইনজীবী গাউছুর রহমান সিরাজী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আগে চারটি মামলা হয়। তবে জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় দুই মামলায় ইতোমধ্যে খালাস পেয়েছেন। তিনি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার মতো কোনো উপাদান নেই। তিনি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। সম্পৃক্ত থাকলে দুই মামলায় খালাস পেতেন না। তার অপরাধ শুধু পূর্বের মামলা। তার রিমান্ড বাতিল করে প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রার্থনা করছি। অপর আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান আছিয়া। অনুমতি দিলে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমার ভাই-ভাবী, আত্মীয় কেউ কোনোভাবে জড়িত নয়। আমার স্বামী আল আমিন দ্বিতীয়বার জেলে গেলে আমার ভাই আমাকে মাদ্রাসাটা করে দেয়, যেন আমি টিকে থাকতে পারি। আল আমিন ২০২২ সালের শেষের দিকে জেল থেকে বের হয়। এসে বলে, সে ভালো হয়ে গেছে। ফোনও চালাত না। এক-দেড় বছর ভালো ছিল।
তিনি বলেন, আল আমিনের বিষয়ে অনেক কিছু জানতাম না। জানলে আগেই ইনফর্ম করতাম। কারণ সে কিছু করলে আমরাই ফেঁসে যাব এই ভয়ে। সে আমাকে অনেক নির্যাতন করত। ফোন চেক করলে বুঝতে পারবেন। সে অপরাধ করতে পারে। আমরা তো অপরাধ করিনি।
এ সময় বিচারক তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ ধরনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন আছে। তদন্তের দরকারে রিমান্ড চেয়েছে। রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা সবার দায়িত্ব। জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করবেন। পরে আদালত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এর আগে, শনিবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে উম্মুল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার ভেতর বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কক্ষের চারদিকের দেয়াল ও ছাদের কিছু অংশ ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
পরবর্তী সময়ে এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটসহ অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসসহ একাধিক টিম ঘটনাস্থলে হাজির হয়। তারা বিস্তারিত উদ্ধার অভিযান ও আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে। দীর্ঘ দুই দিনব্যাপী উদ্ধার অভিযান শেষে পলাতক আসামি আল-আমিনের ভাড়া বাসার ভেতরে বিপুল পরিমাণে বোমা বানানোর সরঞ্জামাদিসহ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, অ্যাসিটোন, নাইট্রিক অ্যাসিড, সাদা রঙের পাউডারসহ একাধিক কেমিক্যালের জারকান এবং কালো প্লাস্টিকে মোড়ানো ৯টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিট। এ ছাড়া, সেখান থেকে ৪০০ লিটার তরল রাসায়নিক ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মো. লিটন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
এনআর/এমজে