সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চান হাইকোর্ট

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত পুরাতন গাছগুলোর বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের রেজুলেশন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে এই রিট মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ জুলাই দিন ধার্য করেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৪ জুন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত যেসব পুরাতন গাছ কাটা হয়েছে এবং যেগুলো এখনও আছে, তা নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন।
এর আগে গত ৯ মে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ৬টি সংগঠন ও এক ব্যক্তি। ৬ সংগঠন ও এক ব্যক্তির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী এ রিট দায়ের করেন।
রিটকারী সংগঠন ও ব্যক্তি হলেন- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরমস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক) এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
গত ৬ মে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে গাছ কাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠান তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদফতর এবং গণপূর্ত অধিদফতর বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে এ রিট দায়ের করা হয়।
এদিকে আদালতের আদেশ অমান্য করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্টুরেন্ট স্থাপনের জন্য গাছ কাটায় সরকারের এক সচিবসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালে একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে আদেশ দেন।

সেসময় আদালত এক বা একাধিক কমিটি গঠন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে স্মৃতিফলক বা জয়স্থাপনা নির্মাণের নির্দেশ দেন। যে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয় সেগুলো হলো-
১. ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভাষণের স্থান,
২. ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান,
৩. ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের স্থান,
৪. ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান,
৫. ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের স্থান,
৬. ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং
৭. ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্থান।
আদালতের নির্দেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সব ধরনের (অপ্রয়োজনীয়) স্থাপনা অপসারণ করতে বলা হয়। তবে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগের কোনো স্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বিদ্যমান সব স্মারক, ভাস্কর্য, স্মৃতিফলক বা জয়স্থাপনা এই আদেশের বাইরে থাকবে। অন্য সব স্থাপনা অবিলম্বে অপসারণ করাসহ আদালত কয়েকটি নির্দেশনা দেন। কমিটির চিহ্নিত স্থানগুলোতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আদালতের ২০০৯ সালের ওই রায় উপেক্ষা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে ব্যবসায়িক স্বার্থে রেস্টুরেন্ট/দোকান প্রতিষ্ঠার জন্য পরিবেশ ধ্বংস করে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যা রায়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে রিটে উল্লেখ করেন মনজিল মোরসেদ। আদালতের আদেশে আপাতত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ রয়েছে।
এমএইচডি/এইচকে