সাঈদ খোকনের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ‘ঢাকাবাসী’ নামের একটি সংগঠন।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
মিছিলটি বাহদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু হয় এবং পুরান ঢাকার নবদ্বীপ বাসক লেনে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় সংগঠনের নেতারা সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলা দুটির করেন কাজী আনিসুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মো. সারোয়ার আলম। ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে এ মামলা হয়। দুই মামলার আদেশের জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মামলাগুলো করা হয়।
সোমবার দেওয়া বক্তব্যে তাপস বলেছিলেন, ‘সাবেক মেয়রের (সাঈদ খোকন) বক্তব্য মানহানিকর। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিভিন্নভাবে যারা টাকা লেনদেন করেছেন তারাই দুর্নীতির অভিযোগ করছেন।’
এদিকে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেট-২-এ ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি ঢাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে অভিযোগ এনে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের গ্রেপ্তার দাবি করেছে ভাড়াটিয়া পরিষদ।
সম্প্রতি গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান মেয়রের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। উচ্ছেদ অভিযানের প্রেক্ষিতে এক ‘ভুক্তভোগী’ সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন। এতেই খোকন-তাপস বিরোধ তুঙ্গে ওঠে।
শনিবার (৯ জানুয়ারি) ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ ডিএসসিসির অভিযানে উচ্ছেদ হওয়া দোকান মালিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধন করা হয়। সেখানে উপস্থিত থেকে সংস্থাটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন, ‘ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’
মানববন্ধনে তিনি বলেন, ‘তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতি মুক্ত করুন, তারপর চুনোপুঁটির দিকে দৃষ্টি দিন। মেয়র তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন। এই শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং করছেন। অপরদিকে অর্থের অভাবে করপোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’
সাবেক এ মেয়র আরও বলেন, ‘যে স্থানটির কথা বলা হচ্ছে সে জায়গাটি দখল ছিল, এখানে এটি একটি উচ্ছেদ কার্যক্রম। কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এমন মন্তব্য করেন তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। তবে আমার এই দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে কোনো ধরনের মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’
সাঈদ খোকনের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘দেশের সকল বেসরকারি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি সংস্থাগুলো থেকে আমানত সংগ্রহ করে। মধুমতি ব্যাংকও তেমন একটি বেসরকারি ব্যাংক। তারাও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে আমানত সংগ্রহ করে চলেছে। সুতরাং এখানে কোনো আইনবহির্ভূত কিছু নেই। দুর্নীতি তখন হয় যখন কোনো কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কমিশন নেওয়া হয়। দুর্নীতি তখন হয় যখন উৎকোচ গ্রহণ করা হয়, সরকারি প্রভাব খাটিয়ে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ করা হয়, তখন দুর্নীতি হয়। যে যতই তার ব্যক্তিগত আক্রোশের জায়গা থেকে নিজের মতো করে মন্তব্য করুক না কেন, আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে।’
টিএইচ/এইচকে