বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় যুক্ত করতে রিট

বলাৎকারকে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ‘নারী ধর্ষণ’ এর অপরাধের পাশাপাশি ‘পুরুষ ধর্ষণ’ অপরাধ হিসেবে যুক্ত করতে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
রিটে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন এনে ‘নারী ধর্ষণ’ এর পাশাপাশি অপরাধ হিসেবে ‘পুরুষ ধর্ষণ’ এর বিষয়টিকেও যুক্ত করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সমাজকর্মী ড. সৌমেন ভৌমিক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক ড. মাসুম বিল্লাহসহ তিনজন এ রিট দায়ের করেন।
রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের আইজিকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
আইনজীবী তাপস কান্তি বল বলেন, দেশে হঠাৎ করেই বলাৎকার তথা পুরুষ ধর্ষণের অপরাধ বেড়ে চলছে। এ ধরনের নির্যাতনকে ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে বিচার করা যাচ্ছে না। এ কারণে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন চেয়ে আদালতে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটটি আগামী সপ্তাহে শুনানি হতে পারে।
এর আগে গত বছরের ২৯ অক্টোবর বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ করার নির্দেশনা চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আরও দুই আইনজীবী।
নোটিশে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষকের দ্বারা ছাত্র বলাৎকার ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আলিয়া মাদ্রাসা এবং কওমি মাদ্রাসাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করে বিশেষত শিশুদের মহিলা শিক্ষক দ্বারা পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার এ নোটিশ পাঠান।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষকের হাতে ক্রমবর্ধমান ছাত্র ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, দেশে দুই ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতি যেমন আলিয়া মাদ্রাসা এবং কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। এসব মাদ্রাসাগুলোতে প্রায় কোটির কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। এ মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীরা পুরুষ শিক্ষকদের অধীনে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে কোমলমতি ছাত্ররা ধর্ষণসহ বিভিন্ন যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তাদের শিক্ষক দ্বারা। এসব যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ফলে অনেক ছাত্ররা মৃত্যুর মুখেও ঢলে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসব ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার প্রচলিত আইনে পুরুষের সাথে পুরুষের জোরপূর্বক যৌনসঙ্গমকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তাই এ ধরনের যৌনসঙ্গমের শাস্তি অনেক কম থাকায় মাদ্রাসার শিক্ষকরা সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে।
তাই লিগ্যাল নোটিশে দণ্ড বিধির ৩৭৫ ধারায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে পুরুষ কর্তৃক ছাত্রদের বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে এ ধরনের অপরাধে ধর্ষণের মতোই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
এমএইচডি/এমএইচএস