সেই মাসুদের খবর জানতে চাইলেন হাইকোর্ট

করোনায় আদালত বন্ধ থাকায় অর্থকষ্টে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাসুদ রানা কালো কোর্ট পরে রাইড শেয়ারিং করে ভাইরাল হয়েছিলেন। অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানাকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তখন আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। আদালত চালু হওয়ার পর সেই মাসুদ রানার খোঁজ-খবর নিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে একটি হত্যা মামলার আসামির জামিন শুনানি চলছিল। এই মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা। মাসুদ রানাকে শুনানিতে দেখে আদালত জানতে চান, মিস্টার মাসুদ আপনি এখনো রাইড শেয়ারিং করেন কি না? তখন মাসুদ রানা বলেন, মাই লর্ড, এখন তো কোর্ট খুলেছে। এখন আর রাইড শেয়ারিং করি না।
পরে অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালত আমার বাইক রাইডিংয়ের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখেছেন। বলেছেন, কোনো কাজই খারাপ বা লজ্জার নয়। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
তবে এর আগে গত ১৯ জুলাই হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ রানাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, এসব করে (রাইড শেয়ার) আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট করবেন না। ভালো হয়ে যান মিস্টার মাসুদ রানা। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।
ওইদিন আইনজীবী মাসুদ রানার দুটি মামলায় দুই আসামির জামিনের আবেদন ছিল এ বেঞ্চে। সকালে মামলা দুটি শুনানি করতে গেলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান তার বাইক চালানোর প্রসঙ্গ তোলেন। তখন আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি তাকে দেখেন বলেন, মিস্টার মাসুদ আপনি বিখ্যাত হয়ে গেছেন উবার চালিয়ে। এগুলো করবেন না। পরে আদালত আইনজীবী মাসুদ রানার দুই মামলায় জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন।
ফেসবুকে দেওয়া পোস্ট নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকা পোস্ট ‘সুপ্রিম কোর্টের ব্যস্ত আইনজীবী এখন বাইক রাইডার!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদটি ভাইরাল হয়।
গত ১৬ জুলাই বাইক রাইডিংয়ের একটি ছবি শেয়ার করে অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন একটি পোস্ট দেন। ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি, আপনার কোর্ট অফিসার এখন বাইক রাইডার’ শিরোনামে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, আইনপেশা লকডাউনে সম্পূর্ণ বন্ধ। লকডাউন ব্যতিত সময়ে সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল কোর্ট ছিল। কিন্তু এখন লকডাউন স্থগিত হলেও কোর্ট বন্ধ। সব পেশার মানুষ কাজ করতে পারছেন, শুধু আইনজীবীরাই কর্মহীন।
পোস্টে তিনি আরও লেখেন, দীর্ঘ এক বছর চার মাস উপার্জনহীন থাকলেও বাড়ি ভাড়া, চেম্বার ভাড়া, বার কাউন্সিল, বার অ্যাসোসিয়েশনসহ জীবন-যাপন ব্যয় থেমে নেই। কোর্ট অফিসারদের (আইনজীবী) চরম দুর্দিন চলছে। আইনজীবীদের চিফ অথরিটি মাননীয় প্রধান বিচারপতি, কিন্তু তাকে কিছু বলা যাবে না। আদালত অবমাননার অভিযোগে সনদ চলে যায়। অনেকেই আপদকালীন ভিন্ন পেশা গ্রহণ করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠরা কোর্ট খোলার আশায় আছেন। কিন্তু আমি অতি সাধারণ, তাই এত কিছু না ভেবে কর্ম এবং উপার্জনের লক্ষ্যে আপদকালীন এ বাইক রাইডিং পেশা শুরু করলাম। সবার নিকট দোয়া চাই। সবাই ভাল থাকবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
এমএইচডি/জেডএস/জেএস