জেএমবির দুই জঙ্গির তথ্য চেয়েছেন আপিল বিভাগ

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৫ নভেম্বর ২০২১, ১০:৪৯ পিএম


জেএমবির দুই জঙ্গির তথ্য চেয়েছেন আপিল বিভাগ

জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ও রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য চেয়েছেন আপিল বিভাগ।

সোমবার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে তাদের আপিল শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ তথ্য চান। একই সঙ্গে তাদের আপিলের ওপর শুনানির জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়েছে।

২০০৪ সালে জামালপুরের গণি গোমেজকে হত্যা করেন জেএমবির জঙ্গিরা। ওই মামলায় ২০০৬ সালে সালেহীন ও রাকিবকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই বছরই ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল- ১ তাদের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ফাঁসি বহাল রাখেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জঙ্গিরা। 

এর আগে জঙ্গি রাকিব ২০০৬ সালে কাশিমপুর কারাগার থেকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় বরাবর একটি চিঠি দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, “জজ কোর্ট হতে ... আইনের মৃত্যুদণ্ড মানি না। হাইকোর্ট যদি আল্লাহর আইনে বিচার করে তবে আমার আপিল আল্লাহর আইনের নিকট। তাগুতি বা ... কোনো কোর্টে  আমি আপিল করব না।”

ওই আপিলের শুনানিতে মামলার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নাহিদ মাহতাব। তিনি বলেন, দুই জঙ্গি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, শায়খ আব্দুর রহমানের নির্দেশে গণি গোমেজকে হত্যা করেছেন। যাকে হত্যা করেছেন তিনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। এ কারণে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান আসামিরা।

প্রধান বিচারপতি বলেন, নিজ নিজ ধর্ম পালনে প্রত্যেকের স্বাধীনতা রয়েছে। তাহলে কেন এ ধরনের হত্যাকাণ্ড? এরপরই আসামির জবানবন্দি পড়ে শোনান আইনজীবী। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, দেখুন আসামিদের জবানবন্দি…, এতে বোঝা যায় কীভাবে এসব যুবকের ‘ব্রেন ওয়াশ’ করে বিপথগামী করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনে সম্প্রতি এক এমপিকে হত্যা করা হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে হত্যাকারী কী অর্জন করল? ওই ঘটনা তো পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল ওই হত্যাকারী।’

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী। আপিল বিভাগে সংযুক্ত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ। শুনানির একপর্যায়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ওই দুই জঙ্গির ফাঁসি কি অন্য কোনো মামলায় কার্যকর হয়েছে? আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী বলেন, এ তথ্য আমার কাছে নেই। তখন রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য নিন।

পরে বিশ্বজিত দেবনাথ আদালতকে বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছেন ২০১৪ সালে ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। তার মধ্যে সালেহীন ছিলেন। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি এখনও পলাতক। তবে জঙ্গি রাকিবকে গ্রেফতার করতে গেলে তিনি পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।’ এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সালেহীনের বিষয়ে কোর্টকে লিখিতভাবে তথ্য দিন। কাল (মঙ্গলবার) রায় দেব।’

বিচারপতি ইমান আলী এ সময় বলেন, ‘জঙ্গি রাকিব যদি মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তার আপিল অ্যাবেটেট (বাতিল) হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে গ্রেফতার হন জঙ্গি সালেহীন ও রাকিব। রাকিবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বছর সিলেট থেকে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে দুই বিচারক হত্যা মামলায় শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ ছয় জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এমএইচডি/এমএআর/   

 

Link copied