যাত্রাবাড়ীতে ২০ হাজার টাকার জন্য খুন, তিন আসামির জবানবন্দি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় পাওনা টাকা চাওয়ায় রাজিব খান নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালত তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন- ইজার আলী (৪০), মোস্তাকুল (৩৫) ও অলিউল্লা ওরফে পোকা (২৮)। রোববার (৭ জানুয়ারি) আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, শনিবার (৬ জানুয়ারি) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে এই তিন আসামিকে আদালতে হাজির করেন। একই সঙ্গে এ তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন।আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ ঘটনায় গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল মাজার গেট এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি সুইচ গিয়ার চাকু, ১২টি মোবাইল ও একটি হাতঘড়ি উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি এনায়েত কবীর সোয়েব বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা রাজিবকে গুরুতর জখম করেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, রাজিব খানের কাছে ২০ হাজার টাকা পেতেন ইজার আলী। চাইতে গেলে টাকা না দিয়ে বরং ইজার আলীর ওপর হামলা করেন রাজিব। পরে এই ক্ষোভ এবং টাকা উদ্ধার করতে দুই সহযোগীকে নিয়ে রাজিবের বাসায় গিয়ে হামলা করেন ইজার। সেসময় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন রাজিব। পরে তার মৃত্যু হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি এনায়েত কবীর সোয়েব বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে পরিকল্পিতভাবে রাজিবের ভাড়া বাসায় ঢুকে ধারালো লোহার কেচি (সিজার) ও সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে তাকে আঘাত করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছেন।
এতে গুরুতর জখম হন রাজিব। অপরাধীরা পালিয়ে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজিব মারা যান বলে জানা যায়। গত ২ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারদের থানায় সোপর্দ করা হয়। এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত রাজিব এবং ইজার আলী আপন ভায়রা-ভাই। তাদের মধ্যে টাকার লেনদেনে শত্রুতার শুরু হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইজার আলী পুলিশকে জানিয়েছেন, ২০ হাজার টাকা ধার দেওয়ার পর পাওনা টাকা দিচ্ছিলেন না রাজিব। বরং এর আগে উল্টো তাকে মারধর করেছিলেন। সেই ক্ষোভের জেরে এবং পাওনা টাকা ফেরত পেতে রাজিবের বাসায় যান ইজার আলীসহ গ্রেপ্তাররা। সেখানে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে চাকু দিয়ে আঘাত করা হয় রাজিবকে। এসময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে গুরুতর আহত হন স্ত্রী মরিয়ম আক্তার (২৪)।
যাত্রাবাড়ীর কাজলার কাঠের মসজিদের পাশে রাজিবের ভাড়া বাসা থেকে আহত রাজিব ও তার স্ত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওইদিন (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে চিকিৎসক রাজিবকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই রাতে ঢামেকে রাজিবের ফুফাতো ভাই জিহাদ জানান, রাজিব স্যানেটারি মিস্ত্রীর কাজ করতেন। স্ত্রী মরিয়ম বাসাতেই থাকতেন। মাত্র ২০ হাজার টাকার জন্য আপন ভায়রার হাতে রাজিবের প্রাণ যাওয়ার এ ঘটনা মর্মান্তিক। মেনে নেওয়া যায় না।
টিএইচ/এইচকে