নন-স্টিক ফ্রাইং প্যান ব্যবহার করা নিরাপদ?
রান্নার জন্য নন-স্টিক প্যান খুব জনপ্রিয়। এর কারণ হলো—এতে অল্প তেলে রান্না করা যায়, খাবার সহজে লেগে যায় না এবং পরিষ্কার করাও বেশ সহজ। কিন্তু এই সুবিধার আড়ালে কিছু লুকানো ক্ষতিকারক দিক রয়েছে, যা হয়তো অনেকেরই অজানা।
আমাদের রান্নাঘরে নানা ধরনের রান্নার পাত্র বা প্যান দেখা যায়। অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি থেকে শুরু করে সিরামিক প্যান পর্যন্ত—অনেক ধরনের পাত্র আমরা ব্যবহার করি। তবে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নন-স্টিক কুকওয়্যার সেট থাকে। এগুলো সাধারণত সাশ্রয়ী, ব্যবহার করা সহজ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এতে কম তেল খরচ হয়। কিন্তু নন-স্টিক কুকওয়্যার কি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্যকর?
নন-স্টিক প্যানের ক্ষতিকর দিকগুলো নিচে আলোচনা করা হলো—
১. পুরনো নন-স্টিক কোটিং থেকে ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো নন-স্টিক কোটিং অতিরিক্ত তাপ এবং রাসায়নিক উপাদানের কারণে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, নন-স্টিক কোটিং তৈরি করতে যে উপকরণ ব্যবহার করা হয়, উত্তাপে তার কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ভেঙে গিয়ে বাতাসে মিশে যেতে পারে। তাই এটি সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে বিপদ হতে পারে।
২. তীব্র তাপে গরম করা উচিত নয়
নন-স্টিক প্যান খালি অবস্থায় চুলায় কখনও তীব্র তাপে গরম করা উচিত নয়। খালি প্যান খুব দ্রুত গরম হয়ে এর কোটিং বা আবরণ নষ্ট করে দেয়। এতে ব্যবহৃত রাসায়নিক স্তর ভেঙে ক্ষতিকর ধোঁয়া তৈরি হয়। গবেষণা অনুসারে, ২৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপে নন-স্টিক কোটিং দ্রুত ভেঙে যায়। এর ফলে তৈরি হওয়া ধোঁয়া শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করলে সাময়িক ফ্লু-জাতীয় উপসর্গ বা শরীরে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। অনেক সময় মাথা ঘোরা বা বমিভাবও দেখা যেতে পারে।
৩. পুরনো প্যান এবং PFOA-এর ঝুঁকি
বর্তমানে বাজারে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ নতুন নন-স্টিক প্যান পিএফওএ (PFOA) মুক্ত। কিন্তু পুরনো প্যান ব্যবহার করলে ঝুঁকি থেকেই যায়, কারণ সেগুলো এই পিএফওএ নামক রাসায়নিক দিয়ে তৈরি হত। এই উপাদানটি দীর্ঘ বছর ধরে পরিবেশে থেকে যায় এবং শরীরেও জমতে পারে বলে গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। গবেষণা বলছে, দীর্ঘদিন এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকলে লিভারের কার্যকারিতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
৪. প্যানে স্ক্র্যাচ বা আঁচড় পড়া
নন-স্টিক প্যানে স্ক্র্যাচ পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। কাঠের বা সিলিকনের স্প্যাচুলা (খুন্তি) ব্যবহার না করলে খুব সহজে প্যানের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একবার আঁচড় পড়লে সেই অংশ থেকে ছোট ছোট কোটিং কণা খাবারের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই কোটিং কণাগুলো সাধারণত খুব বেশি বিষাক্ত হয় না, কিন্তু স্ক্র্যাচ মানেই প্যানের সুরক্ষার স্তর নষ্ট হয়ে যাওয়া। এতে প্যানের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ার পাশাপাশি রান্নার স্বাস্থ্যবিধিতেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।
৫. PFAS নামক রাসায়নিকের ব্যবহার
নন-স্টিক প্যানের আরেকটি সমস্যা হল পিএফএএস (PFAS) নামক রাসায়নিকের ব্যবহার। এই রাসায়নিক বহু দিন ধরে জল ও তেল প্রতিরোধী কোটিং তৈরিতে ব্যবহৃত হত। এগুলো সহজে ভাঙে না এবং পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যায়। গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই রাসায়নিক শরীরেও জমে প্রভাব ফেলতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে খুব সামান্য পরিমাণে হলেও পিএফএএস খাবারের মাধ্যমে শরীরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অনেকেই এখন পিএফএএস-মুক্ত বা ক্ষতিকারক নয় এমন (নন-টক্সিক) কুকওয়্যারের দিকে ঝুঁকছেন।
এমএন

