১২ বছরের আগে শিশুদের হাতে স্মার্টফোন, বাড়বে দুই ধরনের ঝুঁকি
আধুনিক যুগে স্মার্টফোন এখন কেবল বড়দের জিনিস নয়, অনেক অল্পবয়সী শিশুদের হাতেও এটি পৌঁছে গেছে। পড়াশোনা, যোগাযোগ অথবা বিনোদনের জন্য অনেক পরিবারে শিশুরা খুব ছোট বয়সেই নিজের স্মার্টফোন পেয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ছোট বয়সে এটি ব্যবহার করা কি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ? সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যে শিশুরা ১২ বছর বয়সের আগে স্মার্টফোন হাতে পায়, তাদের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক—উভয় ধরনের ঝুঁকিই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু ১২ বছর হওয়ার আগেই স্মার্টফোন পেয়েছে, তাদের মধ্যে অবসাদ, স্থূলতা এবং নিয়মিত ঘুমের সমস্যা বেশি দেখা গেছে। এই গবেষণায় ১০ হাজারের বেশি শিশুর দীর্ঘমেয়াদি তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও আচরণ নিয়ে এখন পর্যন্ত অন্যতম বৃহৎ স্টাডি হিসেবে বিবেচিত।
গবেষকরা দেখেছেন, শিশুর বয়স যত কম থাকে, স্মার্টফোনের প্রভাব তত বেশি গভীর হয়। যারা ১২ বছর হওয়ার আগেই ফোন পেয়েছে, তাদের ঘুম ব্যাহত হওয়া, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং মানসিক অস্থিরতা বেশি দেখা গেছে তাঁদের তুলনায়, যারা এই বয়স পর্যন্ত ফোন পায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের হাতে ফোন গেলে তারা ঘুমানোর সময় ফোন ব্যবহার করে, রাতে স্ক্রিনের আলো চোখে পড়ায় ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়। একইসঙ্গে ফোনে সময় দেওয়ার কারণে তারা বাইরে খেলাধুলা কম করে, ফলে তাদের শারীরিক নড়াচড়া কমে যায়। এতে ক্যালোরি খরচ কমে গিয়ে ওজন দ্রুত বাড়ে। সামাজিক যোগাযোগও কমে যেতে পারে, কারণ বাস্তব বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর বদলে তারা স্ক্রিনে সময় দেয় বেশি।
গবেষকরা আরও বলেন, কিশোর বয়স এমন একটি সময় যখন মানসিক ও শারীরিক বিকাশ দ্রুত ঘটে। এই সময়ে ঘুম, শারীরিক ব্যায়াম ও সামাজিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার এ তিনটির ওপরেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর সেই পরিবর্তনগুলো ভবিষ্যতে আরও বড় মানসিক চাপে পরিণত হতে পারে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব শিশু ১২ বছর বয়স পর্যন্ত ফোন পায়নি, তাদের মধ্যে মানসিক স্থিতিশীলতা তুলনামূলক বেশি থাকে। কিন্তু একবছর পরে যখন কিছু শিশু ফোন পায়, তখন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য আগের তুলনায় খারাপ হতে শুরু করে। তারা সহজেই বিরক্ত হয়, মনোযোগ কমে যায়। অথবা রাতে ঠিকমতো না ঘুমানোর মতো সমস্যা বাড়তে থাকে।
এমএন

