ঘরের কোণে এক টুকরো শখের বাগান
শহরে থাকলেও আমাদের মন পড়ে থাকে গ্রামে। গ্রামের সবুজ প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকে সব সময়। কিন্তু গ্রামে ছুটে যাওয়ার সময় ও সুযোগ মেলে না। শহরে ইট-পাথরের ভিড়ে সবুজের দেখাও মেলে না তেমন। তাইতো ছোট্ট ফ্ল্যাটের এককোণে একটু হলেও সবুজ রাখার চেষ্টা করেন অনেকে। ছাদে গাছ লাগানোর সুযোগ সবার থাকে না। যারা ভাড়া বাসায় থাকেন তারা চাইলে বেলকোনিতেই লাগাতে পারেন পছন্দের গাছ। ইচ্ছে থাকলে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন শহুরে চাষী। যেসব সুগন্ধী পাতা আমরা রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকি, চাইলে সেসবের চাষ করা সম্ভব বাড়িতেই। যেমন ধরুন ধনেপাতা, কারিপাতা, পুদিনাপাতা ইত্যাদি। এসব পাতা হাতের কাছে থাকলে যেকোনো রান্না খুব সহজেই সুস্বাদু করা সম্ভব।
এসব ভেষজ চাইলে বাইরে থেকে কিনে আনা যায়, কিন্তু সেগুলো তরতাজা হবে না এটাই স্বাভাবিক। এদিকে নিজের হাতে যেকোনো গাছ ফলানোর মধ্যে আনন্দই আলাদা। আবার রান্নার সময় তাজা সব উপাদান মিলবে সহজেই। উপকারী অ্যালোভেরা, কাঁচা মরিচের গাছও রাখতে পারেন শখের বাগানে। এই বাগান তৈরির জন্য প্রয়োজন পড়ে না খুব একটা জায়গারও। তাহলে নিজের ছোট্ট ঘরের এককোণেই তৈরি করে নিন শখের বাগান!
পুদিনা পাতার চাষ
বোরহানি বলুন কিংবা জিরাপানি- পুদিনা পাতা দরকার হয় আরও অনেকরকম রান্নায়। পুদিনার চাটনি খাওয়া হয় অনেক রকম ঝাল খাবারের সঙ্গে। আমাদের পেট ঠান্ডা রাখতে এবং হজমশক্তি বাড়াতে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী। প্রয়োজনীয় এই ভেষজ চাষ করতে পারেন বাড়িতেই। বাইরে থেকে যে পুদিনা পাতা কিনে আনা হয় সেগুলোর গোড়া কেটে অল্প পানিতে একরাত ভিজিয়ে রাখুন। এরপরের দিন ছোট কোনো বাটি বা টবে মাটি রেখে তাতে পুঁতে দিন। এবার টবটি আলোতে রাখুন। প্রতিদিন দুইবেলা পানি দেবেন। পুদিনা পাতা কিন্তু বেশ দ্রুত বাড়ে। তাই প্রয়োজন মতো ছেঁটে দিতে হবে।
ঘরের কোণে ধনেপাতা
ধনেপাতার ব্যবহার রান্নাকে আরও বেশি সুস্বাদু করে তোলে। বেশিরভাগ রান্নায়ই এই পাতা ব্যবহার করা হয়। এর সুঘ্রাণ খাবারের প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। ধনেপাতার চাটনিও সমান সুস্বাদু। ধনে পাতা চাইলে পুদিনার মতোই চাষ করতে পারেন। আবার মাটিতে শুকনো বীজ ছড়িয়েও ধনেপাতার চাষ করা যায়। ছোট টবেও চাষ করা যায় এই পাতা। তাই ধনেপাতা চাষের জন্য আলাদা জায়গা নিয়ে ভাবতে হবে না। এদিকে প্রয়োজনের সময় পেয়ে যাবেন তরতাজা সুগন্ধি ধনেপাতা।
সহজেই ফলান পেঁয়াজ পাতা
অন্যান্য ভেষজের মতো এটিও বেশ উপকারী একটি উপাদান। সালাদ, সবজিতে এই পাতা মেশালে খেতে বেশ লাগে। আপনি চাইলে কিন্তু বাড়িতেই ফলাতে পারেন পেঁয়াজ পাতা। পেঁয়াজ কিনে আনার পর সেখান থেকে কিছু পেঁয়াজ নিয়ে শেকড়সহ মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। এরপর অপেক্ষার পালা। কয়েকদিনের মধ্যেই পেঁয়াজের গাছের দেখা মিলবে। এরপর আর কী! সেখান থেকে প্রয়োজনমতো পাতা নিয়ে রান্নায় ব্যবহার করুন।
কাঁচা মরিচ
রাঁধতে গিয়ে হঠাৎ দেখলেন কাঁচা মরিচ শেষ! এদিকে বাইরে থেকে কিনে আনার মতো সময় কিংবা সুযোগ নেই। এমন অবস্থায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে আপনার শখের বাগানটি। যদি আপনি এর আগে সেখানে কাঁচা মরিচের গাছ লাগিয়ে থাকেন তবে তার সুফল ভোগ করতে পারবেন সহজেই। প্রয়োজনমতো মরিচ ছিঁড়ে আনুন আর রান্নায় ব্যবহার করুন। বাজার থেকে মরিচের চারা কিনে এনে লাগাতে পারেন আবার বীজও বুনতে পারেন। একটু যত্ন নিলেই ফলন মিলবে প্রত্যাশার থেকেও বেশি।
থাই পাতা
বিভিন্নরকম স্যুপ রাঁধতে প্রয়োজন পড়ে এই পাতার। থাই পাতা আমাদের শরীরের জন্যও অনেক উপকারী। সুপার শপে এই পাতা কিনতে পাওয়া যায়। তবে নিজের বাগানে থাকলে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু নিয়েই রান্নার কাজে লাগানো যায়। যেকোনো নার্সারিতে টবসহ এর গাছ কিনতে পাবেন। দামও খুব একটা বেশি নয়। শুধু ঘরের এককোণে জায়গা করে দিলেই হবে।
এইচএন