বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প: লিঙ্গ-বিদ্বেষ ভরা বাংলাদেশি সমাজ বদলের ডাক
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশে নারীরা আজও যেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। হিন্দু-মুসলমান, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমাজের সব বর্গেই নারীরা ‘সংখ্যালঘু-দশা’র মধ্যে বন্দি হয়ে আছে। নারীর এই অসহায় দশা সংখ্যা নয়, ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। নারীর মুক্তি ও নরের মুক্তি একই সুতোয় বাঁধা। এই বিষয়গুলোকে চিন্তার কেন্দ্রে রেখেছে প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প’।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে প্রকাশনী সংস্থা ‘হাসান’স’ আয়োজিত লেখক-পাঠক মুখোমুখি সময়ে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ‘বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প’ প্রবন্ধগ্রন্থটি লিখেছেন কবি, প্রাবন্ধিক এবং জেন্ডার ও মিডিয়া বিষয়ক গবেষক আফরোজা সোমা।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক, গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দীন আহমদ, লেখক-অনুবাদক ও সাংবাদিক রওশন জে চৌধুরী, সাহিত্যের ছোটো কাগজ ‘লোক’-এর সম্পাদক কবি অনিকেত শামীম, কবি ও কথাসাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ, কবি ও সাংবাদিক জুয়েল মোস্তাফিজ এবং গল্পকার বাকিবিল্লাহ।
তারা বলেন, সমাজ বদলাতে হলে, সামাজিক মনস্তত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হলে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে হবে। শহুরে জনগোষ্ঠীর কাছে পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছানোর জন্য ‘বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে, গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের কাছে পরিবর্তনের এই ভাবনাগুলোকে কীভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে আরও ভাবতে হবে।
লেখক-অনুবাদক রওশন জে চৌধুরী বলেন, সমাজে বিদ্যমান আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক চর্চার ভেতর দিয়েই যে মূলত নারী ও পুরুষের চরিত্র ও পরিচয় নির্মিত হয় সেই বিষয়টিকে অত্যন্ত নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে ‘বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প’।
অন্যদিকে কবি জুয়েল মোস্তাফিজ বলেন, মূলধারার গণমাধ্যমে, বিশেষত পত্রিকায় ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের খবরগুলোর ভাষা যে লিঙ্গ-সংবেদনশীল নয় সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা রয়েছে এই গ্রন্থে। তাই, দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বইটি অবশ্য জরুরি পাঠ্য।
কবি ও কথাসাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ বলেন, পুরুষতন্ত্র যে শুধু নারীকে নয়, পুরুষকেও বন্দি করে রাখে সেই বিষয়টিকে দারুণভাবে তুলে ধরেছে প্রবন্ধগ্রন্থটি।
কবি অনিকেত শামীম বলেন, পুরুষতন্ত্রের জীবাণুতে শুধু পুরুষ নয় নারীরাও যে আক্রান্ত হতে পারে সেই বিষয়টিকে বিভিন্ন উদাহরণ ও প্রেক্ষিত টেনে এনে পরিস্কার করেছে ‘বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প’।
বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প বইয়ে মোট চারটি অধ্যায় ও ২৭টি প্রবন্ধ রয়েছে। স্বাধীনতার পর অর্ধশতকে এ দেশে নারীর মুক্তি কতটুকু এসেছে? নারীকে কীভাবে আজও এ দেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে রাখা হয়েছে? প্রান্তিক জেন্ডার হিসেবে নারীর ‘সংখ্যালঘু দশা’র পেছনে রাষ্ট্রের দায় কতটুকু? বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিষয়ক খবরগুলোর ভাষা কীভাবে নারীর প্রতি বিদ্যমান অসহনশীলতা ও অসংবেদনশীলতাকে জারি রাখে? এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা কেমন করে পুরুষের পায়েও দিয়েছে বন্দিত্বের জিঞ্জির? এই জরুরি প্রসঙ্গগুলোকে খতিয়ে দেখেছে আফরোজা সোমার প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প’। বইটি ২০২১ সালের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করে প্রকাশনী সংস্থা হাসান’স।
এমএইচএন/এসএসএইচ