‘ফোক মেলোডি অব বাংলাদেশ’-এর প্রাক প্রকাশনা সভা
নোকতা পাবলিকেশন্স প্রকাশ করতে চলেছে ইফতেখার আনোয়ারের সম্পাদিত ‘ফোক মেলোডি অব বাংলাদেশ’, বাংলাদেশের লোকসংগীত বিষয়ক একটি অনন্য সাধারণ এবং অভিনব প্রকাশনা।
বইটি প্রায় এক দশক-ব্যাপী গবেষণা প্রকল্পের ফলাফলগুলির একটি সমন্বিত প্রামাণ্যলিপি, যার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের লোকসংগীতের ঐতিহ্যকে মূলগতভাবে অনুসন্ধান ও অনুধাবন করা এবং চিরায়ত বাংলার এই লোকসংগীতকে তাদের শুদ্ধতম রূপে নথিভুক্ত করে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করা।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা এবং শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সৌজন্যে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রাঙ্গণে বইটির প্রাক প্রকাশনা আলোচনা সভা এবং মিডিয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
মহান গীতিকবি এবং সুরস্রষ্টা রাধারমণ দত্ত, হাসন রাজা, উকিল মুন্সী, কালুশাহ ফকির, আলেপচাঁন দেওয়ান, বিজয় সরকার, ওসমান খান, বখত শাহ চিশতী, মহেশচন্দ্র রায়, নুরুল ইসলাম জাহিদ এবং আরও অনেক গীতিকবির বংশধরেরা উপস্থিত থাকবেন।
এতে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখবেন লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন, কিংবদন্তি লোকশিল্পী আরিফ দেওয়ান, লোকগান গবেষক, হাসন রাজার প্রপৌত্র - শামরিন দেওয়ান এবং উত্তরবঙ্গের সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ড. জেসমিন বুলি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বইটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হবে।
ফোক মিউজিক প্রকল্পটি ইফতেখার আনোয়ারের একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১৪ সালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং উল্লেখযোগ্যভাবে দক্ষ সঙ্গীতশিল্পী, গবেষক এবং সংগীতানুরাগীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল নিয়ে তার মিশনভিত্তিক যাত্রা শুরু করে।
দলটি প্রচলিত মৌলিক লোকসংগীত সন্ধানে, দীর্ঘদিনের হারিয়ে যাওয়া লোকসঙ্গীতের পাণ্ডুলিপি এবং আদি গীতিকারদের জীবিত অনুসারী এবং বংশধরদের সাথে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি উল্লেখযোগ্য অঞ্চলে অন্বেষণ ও ভ্রমণ করেছে।
এ বইতে নথিভুক্ত প্রতিটি গানের মূল উৎস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। এর মধ্যে বেশকিছু গানই কয়েক দশক থেকে কয়েক শতাব্দী ধরে শিল্পীরা গেয়ে আসছেন এবং বেশ কিছু গানেরই একাধিক ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশনার ধরন ও গায়কী প্রচলিত রয়েছে।
প্রতিটি প্রজন্মই পরিবার, বন্ধু আর সমাজের মধ্যে তাদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় এসব গান শুনেছে আর তার সাথে যুক্ত হয়েছে এই ব-দ্বীপের মানুষের ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রকৃতি। এসব মিলে এ গানগুলোর সত্যিকারের উৎস সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে অনুসন্ধান করে, সাক্ষাৎকার নিয়ে এবং সূক্ষ্ম গবেষণার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে এ বইয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি গানের প্রকৃত উৎস নিশ্চিত করা হয়েছে।
বইটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ইফতেখার বলেন, আমি ভেবেছিলাম কাজটি আমি এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করব কিন্তু কাজটি সম্পন্ন করতে আজ ৯ বছর পার হয়ে গেছে, যাই হোক, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায় আমি এই কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। সকল শুভানুধ্যায়ীকে আমি একান্ত ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা এই অসাধারণ যাত্রায় সাহায্য করেছেন এবং অংশ নিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি এই বইটির মাধ্যমে বিশ্বের এই অংশের লোকগীতির অনাবিষ্কৃত এই অমূল্য সম্পদ বিশ্ব অনুভব করবে।
বইটিতে দুইশত দশটিরও অধিক লোকগানের মৌলিক সুরের স্টাফ নোটেশন ও ফোনেটিকাল ট্রান্সক্রিপশন, মূল বাংলা বাণী এবং তাদের ইংরেজি অনুবাদসহ সুরকার এবং গীতিকারদের বিশদ বিবরণ সংযুক্ত করা রয়েছে।
বইটি বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতকে আধুনিকতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম বলে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস। ‘আধুনিকতা’ প্রাথমিকভাবে একটি পাশ্চাত্য ধারণা হওয়ায় এই উপমহাদেশে প্রায়ই এর ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। এটি সম্মিলিত কৃষ্টি, ঐতিহ্য, শিল্প ও সঙ্গীতকে ক্ষুণ্ণ করে না, বরং প্রতিটি শৃঙ্খলায় যৌক্তিক চিন্তাভাবনা প্রয়োগ করার পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে জড়িত।
বইটির লেখকের লক্ষ্য, লোকগীতিকে আধুনিকতার রাজ্যে নিয়ে আসা যাতে দেশের এবং সারা বিশ্বের শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, পণ্ডিত এবং সংগীত শিক্ষকরা এই অপার ঐশ্বর্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তা উপভোগ করতে, শিখতে এবং চর্চা করতে পারেন ।