মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ডা. ছাবিকুন নাহারের ‘নারীকথন’
বাংলা একাডেমির আয়োজনে রাজধানীতে চলছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। মেলা শুরুর ১০ দিনে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এবারের বইমেলায় নারীদের সুস্থ মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ‘নারীকথন : সুস্থ মাসিক ব্যবস্থাপনা সুন্দর জীবন’ নামে বই লিখেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক বিশিষ্ট গাইনিকোলজিস্ট ডা. ছাবিকুন নাহার। বইয়ে তিনি নারীদের পিরিয়ড সম্পর্কিত জটিলতাগুলোর পরিচয় এবং করণীয় প্রসঙ্গে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বই প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় ডা. ছাবিকুন নাহারের। তিনি জানান, ‘নারীকথন : সুস্থ মাসিক ব্যবস্থাপনা সুন্দর জীবন’ বইটি আমার দ্বিতীয় বই, যা প্রকাশিত হয়েছে পেন্সিল পাবলিকেশন্স থেকে। পাওয়া যাচ্ছে বইমেলা ৩০০ নম্বর স্টলে।
বই প্রসঙ্গে ডা. ছাবিকুন নাহার বলেন, একজন মা থেকে মেয়ে, সবাইকেই পিরিয়ডকালে একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। শহরাঞ্চলে বিষয়টি নিয়ে মোটামুটি সচেতনতা থাকলেও মফস্সল এলাকাগুলোতে হাইজিন, মাসিক ব্যবস্থাপনা, নিয়ে কোনো সচেতনতা নেই। এসব এলাকার অধিকাংশ মেয়েই জানে না সে সময়ে কীভাবে কী করতে হয়। এমনকি তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জোরালো কোনো প্রয়াসও নেই। এটা নিয়ে দেশে তেমন বইপত্র নেই, ওরকমভাবে কেউ বলেও না। এমন ধারণা থেকেই বইটি লেখা।
তিনি বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের মাসিক হওয়া স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় এক প্রক্রিয়া। মাসিকের মাধ্যমেই একজন নারী সন্তান জন্মদানের প্রাথমিক সক্ষমতা অর্জন করেন। এমনকি মাসিকের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে নারীর সারাজীবনের প্রজনন স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক সুস্থতা। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, একবিংশ শতাব্দীতেও আমরা এ বিষয়ে নীরবতাই পালন করি। এই নীরবতার আড়ালে কত নারীর চোখের জল বিসর্জিত হয় তা বলা কঠিন। এমনকি কতজন মেয়ে এসময়ে স্কুল কিংবা নিজেদের কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে থাকে সে হিসাবও দুঃসাধ্য।
ছাবিকুন নাহার বলেন, পিরিয়ড সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি সাধারণ ও অন্যটি অসাধারণ। সাধারণ মাসিকের ক্ষেত্রে নারীদের তেমন কোনো জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় না। কিন্তু অসাধারণ মাসিকের ক্ষেত্রে একেকজন নারী একেক ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হয়। কেউ কেউ আবার মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে আজও আমরা কিশোরী মেয়েকে মাসিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কোনো শিক্ষাই প্রদান করতে পারি না। আবার দেশ, সমাজ ও পারিবারিক ট্যাবুও এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে একজন কিশোরী মেয়ে পিরিয়ড সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে হয়রানি হওয়ার পাশাপাশি বিবিধ শারীরিক জটিলতায়ও আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় পিরিয়ডের সূচনাকালে এই বইটি পাঠ করতে পারলে বহু বিষয় সম্পর্কে অবহিত পারবে একজন কিশোরী।
ডা. ছাবিকুন নাহার পেশায় গাইনিকোলজিস্ট। নারী জীবন তথা পিরিয়ডের শুরু থেকে প্রায় সর্বশেষ অবধি নানাবিধ অভিজ্ঞতা তিনি সঞ্চয় করেছেন। সেই সব অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি রচনা করেছেন ‘নারীকথন : সুস্থ মাসিক ব্যবস্থাপনা সুন্দর জীবন’ শিরোনামের বই। এর আগে ২০২২ সালের বইমেলায় ‘রোগীকথন : শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কথকতা’ নামক আরেকটি বই প্রকাশিত হয়।
লেখক পরিচিতি
ডা. ছাবিকুন নাহার ২৫ অক্টোবর ১৯৮১ সালে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোগলাকান্দী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর কেটেছে সবুজ ঘাস, দখিনা বাতাস আর কাদামাটি জল মাখামাখি করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন করেছেন জীবনানন্দের শহর বরিশালের শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে। ফেলোশিপ করেছেন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন থেকে। তিনি ৩০তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি দুই সন্তান আহনাফ সাদিদ অহন, আরনাফ রাদিদ মিহন এবং চিকিৎসক স্বামী ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে ধানমন্ডিতে বসবাস করেন। তিনি পড়তে ভালোবাসেন। লেখালেখি তার আনন্দের জায়গা।
রোগীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে রোগীকথন সিরিজ ছাড়াও তিনি গল্প, কবিতাও লিখেন। ইতোমধ্যে পেন্সিলসহ আরও অনেক সংকলন, ম্যাগাজিন, দৈনিক, মাসিক পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পাঠক মহলে লেডি ইন রেড নামে পরিচিত।
টিআই/এসএসএইচ/