জাফর সাদিকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে কবিতা জীবনান্দের নয়’
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার খড়গমুক্ত থাকতে নিয়মিত কবিতা লেখা শুরু করেন জাফর সাদিক। কবিতা লেখা তার পেশা কিংবা নেশা কোনোটাই না! তবে পঞ্চম শ্রেণী থেকেই লেখালেখি করেন তিনি। বন্ধুরা মিলে ঐকতান নামে হাতে লেখা একটা লিটল ম্যাগাজিন করেছিলেন। অনেকের হয়ে রাত জেগে প্রেমপত্র লিখে দিতেন মাধ্যমিকে থাকতে। সেই পত্র লিখতে গিয়ে মাঝেমধ্যে ছন্দ মিলিয়ে কবিতা লিখতেন। কিন্তু কবিতার বই প্রকাশের ইচ্ছা ছিলো না কখনও। ভেবেছিলেন প্রথম বই হবে কোন অনুবাদগ্রন্থ কিংবা মৌলিক গ্রন্থ।
অবশেষে একুশে বইমেলা ২০২৩ এ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে কবিতা জীবনান্দের নয়’ প্রকাশিত হচ্ছে ২১ ফেব্রুয়ারি। ৫৮টি কবিতা নিয়ে বইটি প্রকাশ করছে নৈঋতা ক্যাফে। বইমেলার ৩৬৩ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাবে।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে জাফর সাদিক জানান, সমসাময়িক নানা ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদী লেখা লিখতেন। কিন্তু যখন ৫৭ ধারার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়, তখন ব্যক্তি ও পেশা জীবনেও তার নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা চেপে বসে। তখন থেকেই কবিতার পংক্তিমালায় মনের ভাব প্রকাশ করতে শুরু করেন। মাঝেমধ্যে প্রাসঙ্গিক ছবি দিয়ে সেগুলো ফেসবুকে পোস্ট করতেন তিনি। নেটিজেনদের অনেকেই সেগুলো পছন্দ করলেন। শীর্ষস্থানীয় ছাপা কাগজে তার কয়েকটি কবিতা প্রকাশ হলে পরিচিতরা জানতে চাইতেন, 'বই আসবে কবে'? এবার মেলার শুরুতেও নানাজনের প্রশ্ন ছিলো- 'মেলায় বই আসছে কী না?' এ থেকেই প্রথমবারের মত বই প্রকাশের পোকা আসে মাথায়।
তিনি আরো বলেন, 'যে কবিতা জীবনান্দের নয়' কাব্যগ্রন্থটি আসলে সেই অর্থে কোনো কবিতার বই নয়, আমাদের অনেকেরই না বলতে পারা প্রেম, বিরহ, ক্ষোভ, বিদ্রোহ, জীবনবোধের কাভারবদ্ধ বাস্তব আখ্যানের এক সংকলন; যা হয়তো রচিত হয়েছে আমার হাতে, কিন্তু তাড়িত করবে প্রতিটা হৃদয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবি রাহেল রাজীব এ বইয়ের মুখবন্ধে লিখেছেন, “দিনশেষে আয়নায় নিজেকে দেখায় বোধ হয় শেষ কথা! যা বলতে চায় মন, সবসময় তা বলা হয় না- হয়ে ওঠে না, কখনো কখনো বলা যায় না। ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ ও রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর যথাযথ স্থান মেলে না, তবে মিলিয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয়। কারণ অনিবার্য খড়গের আড়ালে কারুকাজ করে ফেলায় চূড়ান্ত শিল্প কিংবা তাকেই নান্দনিকতা বলা যায়- সেটার একটা রূপও হয়তো কবিতা। কবিতা কী? এ নিয়ে নানাবিধ বিতর্ক এবং তর্ক দুটোই সমান্তরালে রয়েছে, তবে কবি জাফর সাদিক “যে কবিতা জীবনানন্দের নয়” বলতে যে টুইস্ট ও দ্যোতনা নামকরণেই করেছেন- সেটাকে অনুধাবন ও অনুগমন যেমন জরুরি তেমনি শব্দ ও ধ্বনির আড়ালে যে কষাঘাত, সেটাকে আবিষ্কার করতে গেলে উঠে আসে রুদ্ধ ও বদ্ধ জীবনের পারিপার্শ্ব ও নাভিশ্বাস হয়ে ওঠা অবদমিত চিৎকার কিংবা রাতের গহীনে লুকিয়ে থাকা কোনো শীৎকার! হে পাঠক, আসুন চিৎকার ও শীৎকারে সম্মোহিত হই!”
বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সময়ের আলো পত্রিকার প্রধান চিত্রশিল্পী হামীম কেফায়েত। বইয়ের কবিতাগুলোর সাথে মিল রেখে অলংকরণ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মনিকা ইয়াসমিন। এছাড়া সজ্জাবিন্যাস করেছেন সামছুদ্দোহা সাফায়েত।
সাবেক বিতার্কিক, স্বেচ্ছাসেবক, স্কাউট ও সংগঠক জাফর সাদিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিষয়ে এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগ থেকে উন্নয়ন অধ্যয়নে দ্বৈত স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট থেকে ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জ্যেষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন সময় টেলিভিশনে; দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টিআইবির সহ-সমন্বয়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এছাড়া তিনি প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক এবং বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও-এর সংবাদ উপস্থাপকদের নিবন্ধিত সংগঠন নিউজ ব্রডকাস্টারস অ্যালায়েন্স সোসাইটি (এনবিএ বিডি)-এর প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা বিষয়ক উপকমিটির সভাপতি।
বইটি অনলাইনে কিনতে পাওয়া যাবে রকমারিতে।
এমজে