মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
সাহিত্য মঞ্চ প্রবর্তিত ‘মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার-২০২১’ পাচ্ছেন ছয় গুণী সাহিত্যিক ও সংগঠক। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচটি শাখায় তারা এ পুরস্কার পাচ্ছেন।
শনিবার (২০ নভেম্বর) মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের ১৩৩তম জন্মদিনে সাহিত্য মঞ্চ, চাঁদপুর আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ ও গবেষণা), প্রশান্ত মৃধা (কথাসাহিত্য), জাহিদ হায়দার ও শেখ ফিরোজ আহমদ (কবিতা), ফারুক হোসেন (শিশুসাহিত্য) ও ইলিয়াস ফারুকী (সংগঠক)।
সাহিত্য মঞ্চের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় চাঁদপুর সাহিত্য সম্মেলন ২০২১-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
‘বাংলাদেশের সাহিত্যপাঠ : রাষ্ট্র, রাইফেল ও ব্যক্তিমানুষের বয়ান’ গ্রন্থের জন্যে পুরস্কার পাচ্ছেন মাসুদুজ্জামান। ১৯৫২ সালে রাজবাড়ী জেলায় তার জন্ম। তিনি তাইওয়ানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর শিক্ষকতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত হন।
তিনি একাধারে একজন প্রাবন্ধিক, কবি, অনুবাদক, সম্পাদক ও শিক্ষাবিদ। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। তার প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যের সাথে বিশ্বসাহিত্যের সেতুবন্ধন তৈরীতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। পাশাপাশি নাগরিক জীবনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়কে তুলে আনে।
কথাশিল্পী প্রশান্ত মৃধা তার ‘ডুগডুগির আসর’ গ্রন্থের জন্যে পুরস্কার পাচ্ছেন। ১৯৭১ সালে বাগেরহাটে তার জন্ম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত আছেন। লেখালেখিতে রেখে চলেছেন অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর। তিনি এ পর্যন্ত ১৫টি গল্পগ্রন্থ ও ডজনখানেক উপন্যাস ও দশটির মতো প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন।
তার উপন্যাসে ছিন্নমূল পথের মানুষের জীবনকে এমনভাবে উপজীব্য করা হয়েছে, যা এর আগে বাংলা সাহিত্যে চোখে পড়েনি। তার উপন্যাসে সমকালীন রাজনৈতিক আবহের সঙ্গে নিম্নপেশার মানুষের শ্রেণিচেতনা, বঞ্চনা, প্রেম ও জীবন জীবিকার সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়।
‘প্রেমকে যখন বানিয়ে ফেলেছি খুনি’ গ্রন্থের জন্যে পুরস্কার পাবেন কবি জাহিদ হায়দার। ১৯৫৬ সালে পাবনার দোহারপাড়ায় তার জন্ম। কিশোরকাল থেকেই তিনি অবিরত কবিতার চর্চা করে আসছেন। প্রথম কাব্য ‘স্বাগতকালের পর্যটক’ (১৯৮২)। প্রায় ডজনখানেক কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি লিখেছেন গল্প, উপন্যাস এবং ভ্রমণগ্রন্থও।
‘ধানমন্ডি হ্রদ’ নামক দীর্ঘ কবিতার গ্রন্থের জন্য পুরস্কার পাচ্ছেন কবি শেখ ফিরোজ আহমদ। ১৯৬৩ সালে চাঁদপুরের পুরানবাজারে তার জন্ম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি বগুড়া লেখকচক্রের প্রতিষ্ঠাতা। লেখালেখির পাশাপাশি যুক্ত আছেন থিয়েটার ও নাট্যচক্রের সঙ্গে।
শিশুসাহিত্যিক ফারুক হোসেন ‘লুটোপুটি’ ছড়াগ্রন্থের জন্য পুরস্কার পাচ্ছেন। দীর্ঘ চার দশকেরও অধিককাল ধরে লেখালেখির জগতে বিচরণ করছেন তিনি। ১৯৬১ সালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে তার জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে সহকারী সচিব হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। শৈশব থেকেই লেখার হাতেখড়ি। এপর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। ফারুক হোসেনের ছড়া পরিমিতিবোধসম্পন্ন, নির্মেদ ও বক্তব্যপ্রধান। তার ছড়ায় শিশুতোষ মনস্তত্ত্ব সাবলীলভাবে উঠে আসে।
সংগঠক হিসেবে এবারের মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন পুরস্কারটি পেতে যাচ্ছেন কবি, গল্পকার ও সাহিত্য সংগঠন ‘জিগীষা’র সভাপতি ইলিয়াস ফারুকী। ১৯৫৯ সালে চাঁদপুরে তার জন্ম। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও ইবাইস ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ শেষ করে বর্তমানে ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত আছেন।
এ পর্যন্ত তার অর্ধডজন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। গত শতকের ষাটের দশকে তিনি ‘একতা সংঘ’ নামে একটি সাহিত্য সংঘের সূচনা করেন। সম্পাদনা করতেন ‘উঠোন’ নামে একটি ছোটকাগজ। এরপর সত্তরের দশকের শেষদিকে শুরু করেন শিল্প-সাহিত্যের সংগঠন ‘জিগীষা’।
পুরস্কার নিয়ে সাহিত্য মঞ্চের সভাপতি মাইনুল ইসলাম মানিক বলেন, ২০২০ সাল থেকে আমরা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার দিয়ে আসছি। আমাদের সাত সদস্যের একটি বিচারক প্যানেল রয়েছে। তারা সব প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে বিভিন্ন শাখায় যোগ্য সাহিত্যিক ও সংগঠকের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়ার জন্যে মনোনয়ন দিয়েছেন। সাহিত্যে অবদান রাখা গুণী ব্যক্তিদের সম্মান জানাতে পেরে আমরা আনন্দ ও গৌরব বোধ করছি।
সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান ছিলেন। জাতীয় পর্যায়ের শিল্পসাহিত্যে তার অবদান অনস্বীকার্য। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গত বছর থেকে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। গত বছরও ছয়জনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
আরএইচ