১৪ বছরে দেশ টিভি
ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকারের জন্য লড়াই ও স্বাধীনতার সংগ্রামের পথ ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর শুরু হয় মুক্তির লড়াই। ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের হটিয়ে বিজয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের ৩৮ বছর পর এই দেশেরই গণমাধ্যম জগতে সম্প্রচার স্বাধীনতা নিয়ে ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করেছিল দেশ টেলিভিশন। আজ ২৬ মার্চ দেশ টেলিভিশন (দেশ টিভি) ১৩ পেরিয়ে পা রাখছে ১৪ বছরে।
দেশ টিভি মিশ্র ঘরানা থেকে পুরোপুরি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলে রূপান্তর হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে এর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ দেশ টিভি প্রধান কার্যালয়ে থাকছে আনন্দ আয়োজন। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শুভেচ্ছা জানাবেন চ্যানেলটির জন্মদিনে।
পাকিস্তানি হায়েনার কাছে বন্দি হওয়ার আগে একাত্তরের ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাঙালি জাতির স্বাধীন ভূখণ্ডে যাত্রা শুরুর এমন মহান দিনটিতেই নিজের যাত্রাও শুরু করেছিল দেশ টিভি। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই তাই দেশ টিভি তার প্রতিটি আয়োজনে, সম্প্রচারে, বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে চলেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেই আলোকেই প্রণীত হয়েছে দেশ টিভির প্রতিটি অনুষ্ঠান। বাউল সংহতি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ পঞ্চকবির গান, ঐতিহ্যের পুতুল নাচ, যাত্রা, কবির গান-পালা বা কিংবদন্তিদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ট্রিবিউট টু লিজেন্ড ও কনসার্ট ফর বাংলাদেশ- সংস্কৃতির সব আঙিনা থেকেই বাঙালির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চেয়েছে দেশ টিভি। যুক্ত হয়েছে ভিন্ন জাতিসত্তার কথা, আদিবাসী কবিতায় বা পথে যেতে যেতে’র ভ্রমণে। সরাসরি সম্প্রচারিত কল-এর গান বা প্রিয়জনের গান জনপ্রিয়তা পেয়ে চলেছে বছরের পর বছর।
কখনো বেলা অবেলা সারাবেলা’য় যুক্ত হয়েছেন বিশিষ্টরা। চলতি ইস্যুকে ধারণ করে সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠান সোজাকথা পরে নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘দেশের কথা দশের কথা’য় সম্প্রচারিত হয়ে আসছে। নামে নামে টক্কর-এর সঙ্গে গুণীজনদের নিয়ে আলাদা আলাদা নানা আয়োজন সমৃদ্ধ করেছে সম্প্রচার অঙ্গনকে। আমার ঐতিহ্য অথবা আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশের সঙ্গে দেশ টিভি দিয়েছে ছিন্নপত্র ও কালার্স অব ড্রিমসের মতো অসংখ্য প্রামাণ্যচিত্র। একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর হয়ে আসছে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফাগুনের মলাট-নামের সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান।
২০১১তে দেশব্যাপী আলোচিত ছিল দেশ টেলিভিশনের ‘কে হতে চায় কোটিপতি’র আয়োজন। এবার দেশ টিভি প্রবেশ করতে চায়, জনগণের কাছে তথ্য সেবায়, পুরো দায়বদ্ধতায়। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের ফলে টেলিভিশন সম্প্রচারে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সেই অগ্রযাত্রায় দেশ টিভি এবার ২৪ ঘণ্টার সংবাদভিত্তিক চ্যানেল হিসেবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে।
দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী (এমপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বলেছেন, দায়বদ্ধতার ভেতর দিয়ে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ টিভি তার পথচলার ১৪ বছরে পদার্পণ করছে। পাশাপাশি মিশ্র ঘরানা থেকে পুরোপুরি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলে রূপান্তর হতে যাচ্ছে এটি। নতুন আঙ্গিকে দেশ টিভি আরও এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করি।
দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান বলেন, ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ দেশ টিভির যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ টিভি শুরু থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে বিভিন্ন অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করে আসছে।
গণমানুষের বঞ্চনা ও চাওয়া-পাওয়ার কথা তুলে ধরে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশ টিভি সব সময় সচেষ্ট। সে প্রচেষ্টা আরও ত্বরান্বিত করতে সম্প্রচারে ২৪ ঘণ্টা সংবাদ নিয়ে আসছে এ চ্যানেল। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, নির্মল বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারে দেশ টিভি তার প্রয়াস চালিয়ে যাবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
দেশ টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক বোরহানুল হক সম্রাট বলেন, নতুন আঙ্গিকে নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরুর ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবো নির্ভুল সংবাদ সম্প্রচারে। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি সত্য। তার সঙ্গে দর্শক-শ্রোতাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে।
পিএসডি/এসকেডি