সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হয় না বলেই এই ঘটনা বারবার ঘটে
![সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হয় না বলেই এই ঘটনা বারবার ঘটে](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023October/bulbul-20231030182249.jpg)
সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের সুরক্ষার পক্ষে সোচ্চার না হলে কর্মসূচিগুলোতে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেছেন, সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতনের কোনো বিচার হয় না বলেই এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটে। আজকে আওয়ামী লীগ মারবে তো কাল বিএনপি মারবে। তাই সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের স্থায়ী বিচারিক সমাধান করতে হবে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির আন্দোলনের নামে সাংবাদিকদের উপর হামলা জ্বালাও পোড়াও, পুলিশ হত্যা এবং প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলী-মার্কিনী বর্বরতায় নারী, শিশু, সাংবাদিকসহ গণহত্যার প্রতিবাদে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বিএনপি-জামায়াত জন্মগতভাবে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। তারা সাংবাদিকদের উপর হামলা করছে, এটা নতুন নয়। গত নির্বাচনে তাদের ইশতেহারে গণমাধ্যম সম্পর্কে কিছুই ছিল না। ২০০৭ সালে সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার পরিস্থিতি নেই। বিএনপি-জামায়াতের কাছে যে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা চাইব, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে তাদের চরিত্রেই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নেই। এটা মনে করার কোনো কারণ নাই, বিএনপি সাংবাদিকদের সঙ্গে ভালো আচরণ করবে। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের সুরক্ষার পক্ষে সোচ্চার না হলে এমন ঘটতেই থাকবে। আজকে আওয়ামী লীগ মারবে কাল বিএনপি মারবে।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র দুইজন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। আর একটিরও বিচার হয় নাই। সাংবাদিকরা এ সমাজের সবচেয়ে নিগৃহীত মানুষ। ৩০ জন যে আহত হয়েছে, এর কারণ কোনো দিন সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার হয়নি। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম সংস্থার তালিকায় বাংলাদেশ পার্টলি ফ্রি কান্ট্রির তালিকায়। কারণ সাংবাদিক নির্যাতনের কোনো বিচার হয় না।
বুলবুল বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ না বলেই কোনো সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার হয়নি। সাংবাদিকদের উপর হামলা হলে কেউ পাশে দাঁড়ায় না। রফিক ভূঁইয়ার মৃতদেহ নিয়ে ব্যবসার চেষ্টা করা হয়েছে। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের স্থায়ী বিচারিক সমাধান করতে হবে। নতুবা এমন হামলা চলতে থাকবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ২৮ অক্টোবরের হামলা এবং ফিলিস্তিনের হামলার মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের হাসপাতালে হামলা করে আর বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে হাসপাতালে হামলা হয়। ইসরায়েলে ৭ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ৩৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে ৩২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় সবাই নীরব, বিদেশি দূতাবাসগুলোও নীরব। সাংবাদিকদের উপর বর্বর হামলা কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। পশ্চিমা শক্তিগুলো গণতন্ত্রকে নিজেদের সুবিধার্থে নিজেদের মতো ব্যবহার করে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দল আন্দোলন করবে এটা স্বাভাবিক, গণমাধ্যম সেখানে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকদের উপর হামলার পেছনে দুরভিসন্ধি রয়েছে। এটি আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। আমরা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। ৭২ ঘণ্টা শেষ হলে আমরা লাগাতার কর্মসূচি দেব। আমরা সাংবাদিক, সত্য প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের উপর যখন হামলা হবে, বুঝতে হবে হামলাকারীদের দুরভিসন্ধি হয়েছে। সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে একজন প্রবীণ সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়া মারা গেছেন। প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক মারাত্মক জখমের শিকার হয়েছেন। এগুলো সবই পরিকল্পিত হামলা। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়েছে, হাসপাতালে আগুন দেওয়া হয়েছে, এগুলো খুবই বর্বর ঘটনা।
২৮ অক্টোবর বিএনপির এক দফা কর্মসূচির সমাবেশে দায়িত্ব পালনকালে আহত দুই সাংবাদিক সভায় বক্তব্য রাখেন। তারা হলেন সংবাদ সংস্থা ফোকাস বাংলার জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী মোস্তাফা কামাল এবং ডিজিটাল খবরের আলোকচিত্রী মেহেদী হাসান।
জাস্টিস ফর জার্নালিস্টের কো-চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল চৌধুরী, সাংবাদিক শেখ মামুন হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম, জাস্টিস ফর জার্নালিজমের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
এমএইচএন/এমজে