সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও বিচার দাবি
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত করে এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাংবাদিক মানিক সাহা কলম তুলেছিলেন, তিনি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। পুনঃ:তদন্তের মাধ্যমে তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করতে হবে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মৃতিচারণ সভায় তারা এ দাবি জানান। মানিক সাহার সুহৃদবৃন্দের ব্যানারে আলোচনা সভাটি আয়োজন করা হয়। তার স্মরণে সভায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, মানিক সাহা নিজেও জানতেন, তিনি যেভাবে সত্যের সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার ওপর আক্রমণ আসবে। তবে তিনি কখনোই মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিলেন না। যারা মানিক সাহার মত সাংবাদিকদের হত্যা করে তারা সত্যের শত্রু। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে যে প্রহসন হয় এটা মানিক সাহার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাংবাদিক হত্যায় প্রহসনের বিচার প্রতিরোধ করতে হলে মানিক সাহার আত্মত্যাগকে চিরঞ্জীব রাখা আমাদের দায়িত্ব, প্রতিনিয়ত মানিক সাহার মত আত্মত্যাগীদের স্মরণ করতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আইন যদি অন্যায্য হয় তাইলে সুষ্ঠু বিচার সম্ভব না। মানিক সাহাসহ অন্যান্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পেছনে আইনের প্রয়োগের অভাবই দায়ী। মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমাদের একটি দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলন করতে হবে। একটি টাস্কফোর্স গঠন করে মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পকারীদের উন্মোচন করতে হবে।
মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের বিচারে একটি গণতদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, মানিক সাহা আমৃত্যু জনমুখী সাংবাদিকতা করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমতার পক্ষে আপোষহীন ছিলেন। জনমুখী সাংবাদিকতার জন্যই মৌলবাদী শক্তি তাকে হত্যা করেছে। তার হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে ২০০৬-এ যে রায় হয়েছে তা ছিল গোজামিলের রায়। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের পুনঃ:তদন্ত চাই। এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীসহ জড়িত সবার বিচারের দাবিতে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
স্মৃতিচারণ সভায় মানিক সাহার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নানা স্মৃতি তুলে ধরে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, মানিক সাহা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। নীতিহীনতাকে পরাজিত করে যদি নীতিনিষ্ঠা আনা যায় বাংলাদেশে, তাহলে মানিক সাহার হত্যার বিচার এই দেশে হবেই।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, মানিক সাহাকে হত্যার বিশ বছর পরও আমরা বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের বিচার বরাবরের মতই হচ্ছে না। সাংবাদিকতা, সংস্কৃতি সবকিছুর ওপর হামলা হচ্ছে। মনে হয় এই দেশে কোনো অলিখিত নিয়ম আছে সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হবে না। তাই সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আমাদের অবিলম্বে সোচ্চার হতে হবে।
মানিক সাহা হত্যার পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা বলেন, গণমানুষের স্বার্থে সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন মানিক সাহা। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তিনি আপোষহীন সাংবাদিকতা করেছেন। যুগে যুগে সাংবাদিকদের জন্য তিনি আদর্শ হয়ে থাকবেন।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম , জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, চ্যানেল নিউজ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল কান্তি, সাংস্কৃতিক কর্মী পুলক রাহাসহ অন্যান্যরা।
ওএফএ/পিএইচ