দ্বিতীয় ধাপে ঘর পাচ্ছে আরও ৫০ হাজার পরিবার

আগামী এপ্রিলে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫০ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার নতুন পাকা ঘর পাচ্ছেন। এ প্রকল্পের আওতায় আগামী জুনে তৃতীয় ধাপে হস্তান্তর করা হবে আরও ৫০ হাজার ঘর। এর আগে জানুয়ারিতে সারাদেশে প্রথমপর্যায়ে প্রায় ৭০ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে এ ঘর উপহার দেওয়া হয়।
ঘর নির্মাণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় ধাপে ৫০ হাজার নতুন ঘর নির্মাণ আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সভার সভাপতিত্ব করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেনসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রত্যেক বিভাগের কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন।
সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে আরও ৫০ হাজার ঘরের জন্য মাঠ পর্যায়ে আজকে এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলতেই আজ আমরা একত্রিত হলাম।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এবার ঘরগুলোর ডিজাইনে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন যে ঘর নির্মাণের বাজেটও আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া দরকার। সেজন্য ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের জন্য পরিবহন খরচসহ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল। এবার তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রথম পর্যায়ে গৃহনির্মাণ কার্যক্রমের মান সারাদেশে প্রশংসা হয়েছে বলে জানান তিনি। সচিব বলেন, কাজের গুনগতমান ধরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন-গৃহহীন হাজার হাজার পরিবারকে ঘর করে দিয়েছেন। এ উদ্যোগ দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন এতে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
সমন্বয় সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এগুলো ছাড়াও আমরা এ বছর আরও এক লাখ ঘর বানাবো। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। উপকারভোগী চিহ্নিত করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে আরও নতুন ঘর নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা দ্বিতীয় ধাপে যেই ঘরগুলোর বরাদ্দ দিচ্ছি এটির নির্মাণ সমাপ্ত হতে হবে ৭ এপ্রিলের মধ্যে। আশা করি ১৫ এপ্রিলের দিকে আমরা ঘরগুলো উদ্বোধন করব। ৭ এপ্রিল হচ্ছে আমাদের ডেডলাইন। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ও মান পরীক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
ঘর নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করা যাচ্ছে আগামী এপ্রিলে আরও ৫০ হাজার ঘর আমরা উদ্বোধন করবো। আবার হয়ত জুলাই মাসে আরও ৫০ হাজার উদ্বোধন করতে পারব। সেভাবেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
মুজিববর্ষে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এরইমধ্যে ২ শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছে সারাদেশের ভূমিহীন-গৃহহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার।
ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আশ্রয়ণ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।
এইউএ/এমএইচএস