বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অনুপ্রেরণার গল্প শোনালো ‘ভুলু’

গ্রো ইউর রিডার ফাউন্ডেশন সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি অলাভজনক সংস্থা, যারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ২০১৬ সাল থেকে সারা বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। গত ১ এপ্রিল (শুক্রবার) তারা আয়োজন করে ‘প্রলিফিক ক্লাউড নিবেদিত আমরাও পারি বদলে দিতে বিশ্বকে’ নামক একটি ব্যতিক্রমী শিশুতোষ অনুষ্ঠানের।
এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের। অনুষ্ঠানে পাপেট চরিত্র ‘ভুলু’ শিশুদের একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প পড়ে শোনায়। ভুলুর কণ্ঠ দিয়েছে সেতু হালদার। একইসঙ্গে গল্পটি শিশুদের কাছে ফুটিয়ে তোলার জন্য আয়োজন করা হয় মঞ্চাভিনয়েরও। অভিনয় করেছে অনন্যা, সুমাইয়া, মাইশা ও নাসরা।
গল্পের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার জন্য বিশ্ববিখ্যাত ফ্রিদা কাহলোর জীবনী অনুসরণ করে গল্পটি সাজানো হয়। ফ্রিদা কাহলো নিজে খুবই দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং পোলিও রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি তার বাবা মায়ের দরিদ্রতার কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি, কিন্তু অবশেষে তিনি হয়েছেন সফল তার আত্মবিশ্বাসের কারণে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে কর্মরত ইন্টারপ্রেটর আরিফুল ইসলাম পুরো অনুষ্ঠানটি ইশারাতে বুঝিয়েছেন যেন মূক ও বধির শিশুরা গল্পটি বুঝতে পারে।
এ গল্পের আসর শেষে শিশুদের ছবি আঁকতে দেওয়া হয় এবং সেই ছবিগুলো নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘শিশুরা ছবিগুলো এত সুন্দর করে এঁকেছে যে, কোন শিশুরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তা আলাদা করার উপায় নেই, সবগুলো ছবিই খুব সুন্দর। তারা সবাই গল্পের মূল বিষয়টিই বুঝতে পেরেছে এবং চমৎকারভাবে এঁকেছে।’
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে ইউনিক গিফট ফাউন্ডেশনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা, বিজয়ের পথযাত্রা স্কুলের এবং মেঘ স্কুলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। এছাড়াও প্লে প্যান স্কুল, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিশুরাও অংশগ্রহণ করে এ সুন্দর ইভেন্টে।
এ অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের মানুষের কাছে একটি সুন্দর বার্তার জানান দেওয়া; সব শিশুই সমান প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু তার সঠিক বিকাশ ঘটানোর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিবেশের।
গ্রো ইউর রিডারের প্রতিষ্ঠাতা সাদিয়া জাফরিন বলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আমরা আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করি। কিন্তু তাদের সামাজিক এবং মানসিক সঠিক বিকাশের জন্য বেশি প্রয়োজন সুস্থ্য শিশুদের সঙ্গে পিয়ার লার্নিংয়ের ব্যবস্থা করা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের একীভূতকরণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ আমাদের অনেক শিশুদের আমরা পেছনে ফেলে দিচ্ছি। বিশ্বকে বদলে দেওয়া বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, টমাস আলভা এডিসন, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চিসহ অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, লেখক, গণিতবিদরা তাদের শৈশবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছিলেন। কিন্তু তারা সঠিক পরিবেশ পেয়েছিলেন বলেই পৃথিবীকে বদলে দিতে পেরেছেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এহসান কবির, কমিউনিকেশন অ্যান্ড লার্নিং কনসালটেন্ট, UNFAO এবং সুচিতার প্রতিষ্ঠাতা ফাতিহাসহ আরও অনেকে। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছে শাইরা আলম অথৈ।
