অফিস থেকে ছুটি নিয়ে লাইনে, ১২ ঘণ্টা পর মিলল টিকিট

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার পদে কাজ করেন ইয়াসির আরাফাত। তিনি গত দুই দিন বাসা থেকে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বাধ্য হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে ১২ ঘণ্টার নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পেয়েছেন ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকিট। এ জন্য তাকে অফিস থেকে নিতে হয়েছে ছুটি।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় ইয়াসির আরাফাতের। তিনি বলেন, গত দুই বছর ভালোভাবে অনলাইনে টিকিট কেটে বাড়ি যেতে পেরেছি। কিন্তু এবার সেই সুযোগ হয়নি। গতকাল রাত ১০টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে অপেক্ষা করে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টিকিট পেয়েছি। ভেবেছিলাম এসি কোচের টিকিট পাব, অবশেষে চিত্রা এক্সপ্রেসের দুটি শোভন চেয়ারের টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছি। সারারাত স্টেশনে বসে সময় কেটেছে।
আরেক ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান। তিনি থাকেন রাজধানীর বনশ্রীতে। তিনিও গতকাল রাত ৯টার দিকে রেলস্টেশনে এসেছেন। সারারাত এখানেই নির্ঘুম কাটিয়েছেন। অবশেষে সকাল ১০টায় ঈশ্বরদী স্টেশনের টিকিট পেয়েছেন।
মেহেদি হাসান ঢাকা পোস্টকে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, আমি গত দুই দিনে অনলাইন থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারিনি। এখানেই রাত কেটেছে। সকালে কাউন্টারে দুটো এসি টিকিট চেয়েছিলাম, কিন্তু তা দিতে পারেনি। কাউন্টারের সামনে থাকা মনিটরটাও বন্ধ ছিল। এত টিকিট কোথায় যায় তাও আমার জানা নেই। আমার ধারণা, মনিটর বন্ধ রেখে তারা টিকিট জালিয়াতি করে।
শুধুমাত্র মেহেদী হাসান ও ইয়াসির আরাফাত নয়, এ রকম অনেক মানুষেরই ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও দুপুর ১২টার মধ্যেই প্রায় সব ট্রেনের ২৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

৩০ এপ্রিলের টিকিটের জন্য এখনই লাইন
২৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট যখন বেলা ১২টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়, তারপর পরই কিছু লোককে দেখা গিয়েছে কাউন্টারের সামনে চাদর পেতে বসে অপেক্ষা করতে। কাছে গিয়ে জানা যায়, ৩০ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিটের জন্য তারা অপেক্ষা করছেন।
এদেরই একজন লিমন রাজধানীর মেরাদিয়ায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বনলতা ট্রেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাব, আমার অন্তত ৩টি টিকিট প্রয়োজন। এখানে এসেছিলাম ২৯ এপ্রিলের টিকিটের জন্য। আমি যতক্ষণে কাউন্টারের সামনে পৌঁছেছি, ততক্ষণে ২৯ এপ্রিলের সব টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গিয়েছে। কাউন্টার থেকে জানায় ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ এপ্রিল দেওয়া। যেহেতু এখন আর সময় নেই, তাই বাধ্য হয়ে এখনই বসে পড়েছি। রোজা রেখেছি, নামাজ খাওয়া-দাওয়া সব এখানেই করতে হবে আগামীকাল টিকিট না পাওয়া পর্যন্ত।
শুধু লিমন নয়, এ রকম তিন-চারটি লাইনে আরও প্রায় ১০-১৫ জনকে আগামীকালের টিকিটের জন্য এখন থেকেই অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। তাদের বক্তব্য, যেহেতু অগ্রিম টিকিট বিক্রির কালকেই শেষ দিন, তাই বাসায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগামীকাল টিকিট নিয়ে বাসায় ফিরবেন তারা।
এদিকে এসি টিকিটের বিষয়ে রোববার কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, এক্সপ্রেস ট্রেনে এসি কোচ আছে মাত্র একটি করে। যার আসন সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে যদি ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়, তাহলে আমাদের হাতে থাকে মাত্র ২৫-২৮টি টিকিট। যদি ৩টি সারি থেকে প্রথমজন ৪টি করে টিকিট নেন, তাহলে ওই সারির তৃতীয় ব্যক্তি তো টিকিট পাবেন না।
মাসুদ সারওয়ার জানান, আজ ২৯ এপ্রিল তারিখের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হলো। আগামীকাল দেওয়া হবে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। এর বাইরে আজকে থেকে ২টি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিটও বিক্রি শুরু হয়েছে। যার একটি যাবে দেওয়ানগঞ্জ এবং অন্যটি খুলনায়। সবমিলিয়ে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের প্রতিদিন ২৭ হাজার ৭০০ আসনের টিকিট বিক্রি করছি। এর মধ্যে অর্ধেক অনলাইন এবং বাকি অর্ধেক কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়েছে।
এমএইচএন/এসকেডি