ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প

নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় ঋণের গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) ইউথ ডাবল পাইপ লাইন’ প্রকল্প। ২০১৫ সালে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটি তৃতীয়বারের মতো সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। অথচ তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে প্রকল্পের মাধ্যমে অর্জিত নিজস্ব অর্থেই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হতো।
মঙ্গলবার (১০ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি তৃতীয়বারের মতো সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন পায়। এর মাধ্যমে প্রকল্পের অর্থ ও সময় দুই-ই বেড়েছে।
জানা গেছে, প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটিতে মূল অনুমোদিত ব্যয় নির্ধারিত ছিল ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এতে চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ছিল ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছিল ৫ বছর। সে অনুযায়ী চুক্তির দিন থেকে পরবর্তী ৫ বছর পর ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে চীনকে। কিন্তু দুই দফায় ব্যয় ও সময় বেড়েছে প্রকল্পের। তৃতীয় সংশোধনী অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন মেয়াদ জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত হলেও এপ্রিল ২০২৩ সাল থেকেই ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে। এ হিসেবে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার দুই মাস আগে থেকেই ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।
প্রাথমিক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন মেয়াদ ছিল নভেম্বর ২০১৫ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ সাল পর্যন্ত। তবে বিভিন্ন কারণে ১৮ মাস পরে প্রকল্পের ঋণ চুক্তি সই হয়। আর দুই দফায় প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানোর পর মঙ্গলবার তৃতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা এবং মেয়াদ জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে বাস্তবায়ন মেয়াদ জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত হলেও এপ্রিল ২০২৩ সাল থেকেই ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আমদানি করা অপরিশোধিত/পরিশোধিত তেল খালাস সহজ করা ও লাইটারিং অপারেশন ব্যয় কমানো। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে বর্তমান রিফাইনারির প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করা এবং বাৎসরিক ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা ১.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে ৪.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত করা। ইআরএল এর জরুরি শাটডাউনের ব্যাকআপ হিসেবে মহেশখালীতে ট্যাংক ফার্ম স্থাপন এবং পরিশোধিত তেল মজুদ ও সংরক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
একনেকে প্রকল্পটির সংশোধনের কারণে বলা হয়েছে, প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জার্মানির আইএলএফ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে করা মূল চুক্তির কর্মপরিধির বাইরে কুতুবদিয়া চ্যানেল এবং মাতারবাড়ি অ্যাপ্রোচ চ্যানেল অংশে কাজের ডিজাইন রিভিউ ও কাজের তদারকি, সম্পাদিত চুক্তির কর্মপরিধির অতিরিক্ত নতুন কাজ, নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ডিটেইল ডিজাইন কাজ এবং মূল চুক্তি বহির্ভূত প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট কাজ সম্পাদন করায় ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া। এছাড়া আইটি, ভ্যাট, ব্যাংক চার্জ, বিভিন্ন ফি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির কারণে সংশোধন করা হয়েছে।
এদিকে প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই আমাদের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ সেক্টরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং এবং ডাবল পাইপলাইন এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ নতুন। এটি একটি ইউনিক প্রকল্প। এ প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। কিন্তু শুরুর পর থেকে ১৮ মাস সময় লেগেছে ঋণ পেতে। তার মানে ঋণ চুক্তি সই হয়েছে ১৮ মাস পরে। যার জন্য মনে হচ্ছে প্রকল্পটি শুরু করতে দেরি হয়েছে। আসলে আমাদের ঋণটা পেতে দেরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই প্রকল্পটি যখন শুরু করা হয়, তখন ১.৫ মিটার গভীরে পাইপলাইন ছিল। পরে জাহাজে শিপিং ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোল্ড পাওয়ার এর কয়লা আনতে গিয়ে আমাদের পাইপলাইন বাধা হয়। পরে এই তিন সংস্থার অনুরোধে পাইপলাইনটি ১.৫ মিটার থেকে ৬.৯ মিটার গভীরে নেওয়া হয়েছে। এই বেশি কাজের জন্য আমাদের ৩০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এই টাকাটা আমরা চায়না এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে নেইনি। চীন যে পরিমাণে অর্থ দিয়েছিল সেই অর্থের পরিমাণ বাড়েনি। সুতরাং গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলেও অতিরিক্ত অর্থের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের কোনো সম্পর্ক নেই।’
এসআর/জেডএস